সূত্র :- 3.bp.blogspot . com
ভ্রমণ স্থানঃ দীঘা
দেশঃ ভারত
রাজ্যঃ পশ্চিমবঙ্গ
জেলাঃ পূর্ব মেদিনীপুর
ভাষাঃ বাংলা
দীঘা সমুদ্র সৈকত যা পশ্চিমবঙ্গ জেলার পূর্ব মেদিনীপুরে অবস্থিত। কলকাতা থেকে দীঘার দূরত্ব মাত্র ১৮৭ কিমি। বিশাল সমুদ্র সৈকত, ঝাউ বন এবং প্রাকৃতিক অপূর্ব সৌন্দর্য মিলিয়ে দীঘা সমুদ্র সৈকত একটি অসাধারণ ভ্রমণের স্থান সমুদ্র প্রেমীদের জন্য। আপনার ভ্রমণের বাজেট যদি অল্প থাকে তাহলে আপনার জন্য দীঘা ভ্রমণ অসাধারণ চয়েস হবে। ৭ কিলোমিটার এই দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের এক পাশে জলরাশি আর অন্য পাশে ঝাউ বনের অসাধারণ সাদৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দীঘায় দুই ধরণের সৈকত রয়ছে ওল্ড দীঘা, নিউ দীঘা। সমুদ্র মজা উপভোগ করার জন্য হাতের কাছে দীঘা একটি অসাধারণ জায়গা।
লোকেশনঃ
দীঘা সমুদ্র সৈকত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অবস্থান করছে। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার সুমদ্র সৈকত দীঘা। কলকাতা থেকে বা হাওড়া থেকে দীঘা দূরত্ব ১৮৩ কিলোমিটার এবং আপনি যদি খড়গপুর থেকে যান তাহলে তাহলে দূরত্ব পড়বে ২৩৪ কিমি।
দীঘা 21°38′18″N 87°30′35″E অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। দিঘা কলকাতা বা হাওড়া থেকে তমলুকের মাধ্যমে মহাসড়ক এবং রেল সংযোগ সংযুক্ত। দিঘা ও হাওড়া ও পূর্ব ভারতের অন্যান্য স্টেশনগুলির মধ্যে অনেক ট্রেন সংযুক্ত করা হয়েছে।
দীঘার ইতিহাসঃ
বর্তমানে দীঘার স্থানটি প্রাচীন নাম ছিল বীরকুল। তথ্যসূত্রে শোনা যায় একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী জন ফ্রাঙ্ক স্মিথ ১৯২৩ সালে এই পরিবেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। তিনি সেই সময় তখনকার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়কে অনুরোধ করেন সমুদ্র রিসোর্ট হিসাবে গড়ে তোলার জন্য।
দীঘায় একটি পুরনো গির্জা বিখ্যাত, যা ওল্ড দীঘার মেইন গেটের সামনে দেখা যায়। এই স্থানটি আলঙ্কারপুর নামে পরিচিত। নিউ দীঘায় একটি নতুন মিশন গড়ে উঠেছে যা সিন্ধু তারা নামে পরিচিত। এটি একটি চার্চ যা আপনি খুঁজে পাবেন অমরাবতী পার্কার পাশে। এই চার্চে আপনি আপনার পরিবারের কল্যাণের জন্য কামনা করতে পারবেন। দীঘার পাশাপাশি আরও অনেক লোকেশন যেখানে আপনি ঘুরতে যেতে পারবেন আছে যেমন – তাজপুর, ওড়িশা সমুদ্র ইত্যাদি।
দীঘার আবহাওয়াঃ
দীঘা সাধারণত পাঁচটি ঋতু রয়েছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, শীত এবং বসন্ত। গ্রীষ্মকাল চলে এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে জুন পর্যন্ত। এবং যার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি সমুদ্রের ঠাণ্ডা বাতাস এই সময় আবহাওয়া মনোরম রাখে।
গ্রীষ্মের পরবর্তী ঋতু আসে বর্ষা যা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত চলে এবং এই সময়টা এখানে বৃষ্টিপাত হয়। শরৎকাল চলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং এই সময় এখানকার আবহাওয়া থাকে ২৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের কাছাকাছি। এই সময় পরিবেশের আবহাওয়া খুব মনোরম থাকে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ১৫/১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। বসন্ত ঋতু হল দীঘায় সবচেয়ে আনন্দময় ঋতু যা শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাঝ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে বছরে বিভিন্ন জলবায়ু প্রভাবের মাধ্যমে দিঘা সারা বছর ধরে অনেক উপভোগ করার সময়।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
Source: Instagram https://www.instagram.com/p/BzNNjlYHZBX/
বাসের পরিষেবা –
কলকাতার ধর্মতলা, বর্ধমান, শিলিগুড়ি, বহরমপুর, আসানসোল এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অংশ থেকে ঘন ঘন বাসের পরিষেবা রয়েছে। কলকাতার হাওড়া বাস টারমিনাস থেকে প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর অন্তর দীঘাগামী বাস ছাড়ে। কলকাতা থেকে আপনার দীঘা পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৫ ঘণ্টা।
ট্রেন পরিষেবা –
দীঘা যাওয়ার জন্য রেল পথের সুবিধা রয়েছে। সাঁতরাগাছি রেল স্টেশন থেকে একটি DMU সার্ভিসের সুবিধা রয়েছে এবং হাওড়া স্টেশন থেকে অনেক দীঘাগামী ট্রেন রয়েছে।
কলকাতার হাওড়া থেকে দীঘা আসার ট্রেন
নাম |
সময় |
তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস |
সকাল ৬.৩৫ মিনিট |
পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস |
সকাল ৭.৫০ মিনিট |
সুপার এসি এক্সপ্রেস |
সকাল ১১.১০ মিনিট |
কান্ডারী এক্সপ্রেস |
দুপুর ২.১৫ মিনিট |
খাবারঃ
Source: Instagram https://www.instagram.com/p/Bro1vcKAqR5/
দীঘায় বাঙালি খাবারের পাশাপাশি চাউমিন, মোগলাই, চাইনিজ এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়। সমুদ্রের ধারে ডাব পাবেন দিনেরবেলায়। সবচেয়ে বেশি আপনি যেটা পাবেন মাছ। দীঘায় মোহনায় মাছ খুব জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকারের মাছ আপনি দেখতে পাবেন। সমুদ্রের ধারে সন্ধ্যে বেলায় মাছ ভাজার দোকান বসে। চিংড়ি, পমফ্রেট, শুঁটকি থেকে শুরু করে এমন কোন মাছ পাওয়া যায়। দীঘা গিয়ে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় খাবার মাছ ভাজা।
সমুদ্রের ধারে মোহনায় সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া কাজু, বরফি কাজু বাদাম সহ বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। দীঘার হোটেলে ভিন্ন ধরণের বাঙালী খাবার পাবেন এবং থালি পেয়ে যাবেন।
ভ্রমণের জায়গাঃ
দীঘায় এবং দীঘার আশেপাশে প্রচুর ঘোরার জায়গা রয়েছে। খুব কাছাকাছি বেশি দূরত্বে নয়। দীঘায় আগের থেকে দীঘা অনেক উন্নত হয়েছে এবং ভ্রমণের জায়গাগুলি আরও সুন্দর হয়েছে এবং বিশ্ব বাংলা গেটে নতুন রুপে সেজে উঠেছে দীঘার সমুদ্র।
- ওল্ড দীঘাঃ
নিউ দীঘা হওয়ার আগে থেকে ওল্ড দীঘা জনপ্রিয়তা ছিল। বহু পর্যাটক আসে পুরাতন দীঘায় ঘুরতে যায় শুরু থেকে এখনো ওল্ড দীঘার জনপ্রিয়তা কম নয়। যত দূর চোখ যায় জলরাশি সৌন্দর্য চোখে পরে। এখনো বিশাল বাজার বসেই ওল্ড দীঘার ভেতরে। সন্ধ্যের পরে সমুদ্রের ঠাণ্ডা বাতাস উপভোগ করতে মানুষ ভিড় বাড়ায় ওল্ড দীঘতেই। সমুদ্র পারে রয়েছে ঝাউবন। প্রচুর হোটেলের সুবিধা থাকায় মানুষ এখনো ওল্ড দীঘায় হোটেলের সন্ধান করে। বর্তমানে বিশ্ব বাংলা গেট হয়েছে ওল্ড দীঘায়। বিশাল বড় বিশ্ব বাংলার গেট থেকে ঢুকে পাবেন সুন্দর সজ্জিত একটি উদ্যান। যেখানে পর্যাটক বসার জায়গাও রয়েছে।
- নিউ দীঘাঃ
নিউ দীঘা মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্ব ওল্ড দীঘা থেকে। আগে জায়গাটি তেমন কিছু ছিল না তেমন জনপ্রিয় ছিল না ওল্ড দীঘার মতো। বর্তমানে বাজার, বড় বড় হোটেল এবং স্থানের উন্নতি হওয়ার ভিড় বাড়ে পর্যাটকদের। সমুদ্রে স্নান করার জন্য ওল্ড দীঘা অসাধারণ। রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে নিউ দীঘাতেই। সমুদ্রে সি বোটিং, প্যারাসুট চড়ার সুবিধা রয়েছে। শীতল শান্ত সমুদ্রের হাওয়া, ঝাউ বন এবং প্রাণবন্ত পরিবেশের জন্য ভালো ভ্রমণের জায়গা।
- অমরাবতী পার্কঃ
নিউ দীঘা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে রয়েছে অমরাবতী পার্ক। অমরাবতী পার্ক একটি সুন্দর লেক। ভিন্ন রকমের ফুলে সজ্জিত এই পার্কটি। রাইডিং , বোটিং ব্যবস্থা রয়েছে পার্কে। বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য এই পার্কটি একটি আদর্শ স্থান। এছাড়াও রয়ছে সর্প উদ্যান এবং রোপওয়ে। রোপওয়ে থেকে পর্যাটকরা সমুদ্র দর্শনের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে হবে।
- শঙ্করপুর বীচঃ
দীঘা সমুদ্রের সামনে আরেকটি বীচ রয়েছে শঙ্করপুর বীচ। দীঘা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরেই শঙ্করপুর বীচ। শঙ্করপুর বীচ শান্ত নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত এবং একটি মৎস্যবন্দর। কলকাতা থেকে দীঘা সড়ক পথে যেতে আট কিলোমিটার দূরে রয়েছে রামনগর। সেখান থেকে আরও এক কিলোমিটার এগিয়ে চম্পখাল দান হাতে রেখে ওই পথে আরও ৪ কিমি গেলেই পড়বে শঙ্করপুর। এই নির্জন সমুদ্র সৈকতে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া যায় যেখানে দেখা মিলবে ঝাউগাছ এবং কেয়া ঝোপ।
- উদয়পুরঃ
নিউ দীঘা থেকে একটু দূরে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক পেরিয়ে পড়বে উদয়পুর। লাল কাঁকড়ার জন্য এই জায়গা খুব জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে আপনি গেলে দেখতে পাবেন ঝাউবন থেকে শুরু করে কাজু বাদামের গাছ। সকালে দিকে এই নিরিবিলি সমুদ্র সৈকতে আনন্দ উপভোগ করে পর্যাটকরা।
- মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম:
ওল্ড দীঘায় কাছেই রয়েছে মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম। এই অ্যাকুয়ারিয়াম মটি ভারতের সসবচেয়ে বড় অ্যাকুয়ারিয়াম মটির মধ্যে একটি। সবচেয়ে অসাধারণ ব্যাপার হল সমুদ্রতল থেকে বিশাল বড় এই অ্যাকুয়ারিয়াম। ভিন্ন প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী, শামুক, ঝিনুক, বিভিন্ন ধরণের জলজ উদ্ভিদ।
- চন্দনেশ্বর মন্দিরঃ
চন্দনেশ্বর মন্দির একটি শিব মন্দির। এই মদিরে জনপ্রিয়তা খুব বেশি। দীঘা থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে এই মদির। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এই মদিরে। অনেক দর্শনার্থী এই মদিরে তাদের মনস্কামনা পূরণ করার জন্য আসে। অনেকের মতে এখানে যা মনস্কামনা করা হয় তা সফল হয়। এছাড়াও এই মন্দিরের পরিবেশ অপূর্ব।
ছোট খাটো ট্যুরে যেতে চান তাহলে ঘুরে আসুন দীঘা থেকে পাশাপাশি করে নিন সমুদ্রের জলরাশির উপভোগ।
- তালসারিঃ
তালসারি একটি অপূর্ব সমুদ্র সৈকত এবং দর্শনীয় স্থান। বিভিন্ন পর্যাটকের আগমন এই বীচে। এই সমুদ্রের জলের স্রোত খুব কম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। দীঘা গেলে অবশ্যই এই স্থানটি থেকে ঘুরে আসুন। বীচে খেজুর, কাঁটা গাছের শাড়ি এবং নারকেল গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
- দীঘা বিজ্ঞান ভবন:
আপনি কি বিজ্ঞান প্রেমিক তাহলে দীঘায় গেলে অবশ্যই ঘুরে আসুন দীঘার বিজ্ঞান ভবন থেকে। নিউ দীঘা থেকে এটি বেশি দূরত্বে নয়। আপনার নিজের মানসিক মনোরঞ্জনের জন্য এই জায়গাটা সেরা। ভিন্ন ধরণের প্রোজেক্ট, বিজ্ঞান গ্যালারী, প্রাণী বিজ্ঞান গ্যালারি আরও আকর্ষণীয় জিনিস রয়েছে এই বিজ্ঞান ভবনে।
সারকথাঃ
কম বাজেটে দীঘা ট্যুর উত্তম।