বাংলা ক্যালেন্ডারে ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস মিলেই শরৎকাল। বাঙ্গালির কাছে শরৎকাল মানেই উৎসবের ঋতু। এই সময়ে দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা এবং ভাইফোঁটা-এর মতো অনেক উৎসবই পালিত হয়। অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রীদের শরৎকাল (Autumn season) নিয়ে অনুচ্ছেদ লিখতে দেওয়া হয়। সহজ ভাষায় শিক্ষার্থীদের জন্য রইল শরৎকাল রচনা (Autumn essay)।
Read more: বর্ষাকাল রচনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায়
শরৎকাল রচনা (১০০ শব্দ)
১. আমার প্রিয় ঋতু হল শরৎকাল।
২. বর্ষাকে বিদায় দিয়ে শরৎ আসে পেজা তুলোর মেঘের ভেলায় করে।
৩. এই সময়ে আকাশ থাকে মেঘমুক্ত ও নির্মল।
৪. ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস মিলেই শরৎকাল।
৫. শরতের সোনালি রোদ্দুর, কাশফুল, শিউলি ফুলের সুগন্ধ পরিবেশকে করে তোলে মাতোয়ারা।
৬. আমলকী, জলপাই, তাল, জগডুমুর, চালতা, করমচা, আপেল, ডালিম এবং আঙ্গুরের মতো ফল পাওয়া যায়।
৭. শরৎ ঋতু হল উৎসবের ঋতু। বাঙ্গালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজা এই ঋতুতেই অনুষ্ঠিত হয়।
৮. শরৎকালে তাপমাত্রা না থাকে খুব বেশি উত্তপ্ত না থাকে শীতের তীব্র হাওয়া, আর নাই থাকে বর্ষার ঘনঘটা।
৯. শরৎকালেই গাছের পাতা ঝরে গিয়ে নতুন সবুজে ভরে ওঠে, এই সময় থেকেই দিন ছোট হয়ে রাত বড় হতে থাকে।
১০. বাংলায় ছয়টি ঋতুর মধ্যে তৃতীয় ঋতু হল শরৎ ঋতু।
Read more: গ্রীষ্মকাল রচনা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায়
শরৎকাল রচনা (২০০-৫০০ শব্দের)
বাংলা ঋতুচক্রে বসন্ত যদি হয় ঋতুরাজ, তবে শরৎ হল ঋতুর রানী। বর্ষা শেষেই শরৎ ঋতুতে প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে। আকাশের বুকে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘ, ঝলমলে রোদ আর নির্মল বাতাসে এই সময়ের পরিবেশ হয় মনমুগ্ধকর।
ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস মিলেই শরৎকাল। ইংরাজী মাসের আগস্টের মধ্যভাগ থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কালকে শরৎকাল হিসাবে ধরা হয়। এই সময় তাপমাত্রা খুব বেশি উত্তপ্ত হয়না।
শরতের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় দিক হল গাছের পাতার সবুজ রঙ থেকে লাল, হলুদ এবং সোনালী রঙে পরিবর্তন। এই সময় থেকেই দিন ছোট হতে থাকে রাত বড় হতে থাকে।
শরৎকালে হালকা শিউলি ফুলের গন্ধ আর কাশফুলের শুভ্রতা চারপাশকে মোহময় করে তোলে। এই সময়ে ফোটা কিছু ফুল হল – কাশ, শিউলি, শাপলা, পদ্ম, জবা, জুঁই, টগর ইত্যাদি। এই ঋতুতে আমলকী, জলপাই, তাল, জগডুমুর, চালতা, করমচা, আপেল, ডালিম এবং আঙ্গুরের মতো ফল পাওয়া যায়।
শরৎকাল মানেই বাঙালীর প্রধান উৎসব দূর্গাপূজা। এই সময়ে মায়ের আগমনে বাংলার ঘরে ঘরে শুধুই উৎসবের আমেজ। লক্ষীপূজা ও কালীপূজাও এই শরৎকালেই উদযাপিত হয়ে থাকে।
Read more: রইল ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় শিক্ষক দিবসের রচনা
শরৎকাল রচনা (৫০০-১০০০ শব্দের)
ভুমিকাঃ ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যময় ঋতুর দেশ, যেখানে প্রতি বছর পরিবর্তিত ঋতু আমাদের জীবনে বিভিন্ন রঙ এবং উত্তেজনা নিয়ে আসে। এই সমস্ত ঋতুর মধ্যে শরৎ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুল দেখলেই আমরা সবাই বুঝি শরৎ এসেছে।
সময়সীমাঃ ঋতুচক্রের তৃতীয় ঋতু শরৎ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস নিয়েই শরৎকাল। ইংরাজী মাসের আগস্টের মধ্যভাগ থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কালকে শরৎকাল হিসাবে ধরা হয়।
আবহাওয়াঃ
শরৎকালের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে কারণ এটি গ্রীষ্মের উত্তাপের পরে একটি শীতল এবং মনোরম অনুভূতি নিয়ে আসে। এই সময় আবহাওয়া থাকে শান্ত ও স্নিগ্ধ। আকাশের বুকে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘ, ঝলমলে রোদ আর নির্মল বাতাসে এই সময়ের পরিবেশ হয় মনমুগ্ধকর।
শরতের নানা ফুল-ফলঃ
কাশফুল হল শরৎকালে ফোটা অন্যতম ফুল। শরতে কাশবনের স্নিগ্ধ শোভা প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত রাখে। শরৎ মানেই শিউলি ফোটার দিন। হালকা শিশির ভেজা সকালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা শিউলি ফুলও শরতের আরও একটি পরিচয়। এছারাও শাপলা, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, কামিনী, বকুল, ছাতিম এবং দোলনচাঁপা সহ বিভিন্ন ফুল ফোটে এই সময়ে।
এই ঋতুতে আমলকী, জলপাই, তাল, জগডুমুর, চালতা, করমচা, আপেল, ডালিম এবং আঙ্গুরের মতো ফল পাওয়া যায়।
উৎসবঃ
শরৎকাল মানেই বাঙালীর প্রধান উৎসব দূর্গাপূজা। শরৎঋতুতে দূর্গোৎসব হয় বলেই দূর্গাপূজাকে শারদীয় উৎসব বলা হয়। এই সময়ে বাংলার ঘরে ঘরে আকাশ বাতাস মুখরিত হয় মায়ের আগমনে ঢাকের বাদ্যিতে। উৎসবের আনন্দে বাঙালী হয় মাতোয়ারা। দূর্গাপূজা ছাড়াও লক্ষীপূজা ও কালীপূজাও এই শরৎকালেই উদযাপিত হয়ে থাকে।
Read more: ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বামী বিবেকানন্দের রচনা
শরৎকালের প্রাকৃতিক রুপঃ
শরৎকাল মানেই প্রকৃতির এক অনন্য রূপ। এই সময় চারিদিকে শুধুই সবুজের ছড়াছড়ি। গাছপালা হয়ে ওঠে সতেজ ও সুন্দর। ধানের ক্ষেতের মাঠ হয়ে ওঠে সবুজ প্রান্তর। শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধে চারপাশ ভরে ওঠে এবং ভোরের বেলা শিউলি ফুল শিশিরে ভিজে ঘাসের উপর ছড়িয়ে থাকে, যা প্রকৃতিতে এক অসাধারণ দৃশ্য সৃষ্টি করে।
উপসংহারঃ
শারদীয়া উৎসব, কাশফুলের সৌন্দর্য, এবং প্রকৃতির পরিবর্তন সব মিলিয়ে শরৎকাল আমাদের জীবনে বিশেষ মাত্রা যোগ করে। মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ, দুঃখ, বেদনা তথা ক্লান্তির গ্লানি ভুলিয়ে শরৎ ঋতু যেন আমাদের বুঝিয়ে দেয় সুখ-দুঃখের দোলাচালে উত্থান-পতনের নামই হলো জীবন।
শরৎ ঋতুর মত মনোরম ঋতু আর হয়না। কারণ এইসময় না থাকে গরমের হাঁসফাঁস না থাকে শীতের হাওয়া, না থাকে বর্ষার ঘনঘটা। এই সময় প্রকৃতি থাকে উজ্জ্বল ঝলমলে।
Read more: ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহজ ভাষায় নারী শিক্ষার রচনা
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ
প্রঃ শৎকালে প্রকৃতির রূপ কেমন থাকে?
উঃ শরৎকালে আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়ায়। সূর্যের উত্তাপও কিছুটা কমে আসে। মাঠের ফসল সবুজে ভরে ওঠে। চারদিকে শিউলি ও কাশফুল ফুটতে দেখা যায়। প্রকৃতিতে স্নিগ্ধতা বিরাজ করে।
প্রঃ শরৎ কালে কি কি ফুল ও ফল হয়?
উঃ শরৎকালে ফোটা কিছু ফুল হল – কাশ, শিউলি, শাপলা, পদ্ম, জবা, জুঁই, টগর ইত্যাদি। এই ঋতুতে আমলকী, জলপাই, তাল, জগডুমুর, চালতা, করমচা, আপেল, ডালিম এবং আঙ্গুরের মতো ফল পাওয়া যায়।
প্রঃ শরৎকালে কোন উৎসব পালিত হয়?
উঃ শরৎকাল এর মূল আকর্ষণ দূর্গাপুজা। যা বাঙালির প্রধান উৎসব। দুর্গাপূজাকে শারদীয়া উৎসবও বলা হয়। দুর্গাপূজা ছাড়াও লক্ষ্মীপূজা কালীপূজা উদযাপিত হয় এই শরৎকালেই।

