‘মেয়েবেলা’ ধারাবাহিক আচমকাই ছেড়ে চলে গেছেন অভিনেত্রী রুপা গাঙ্গুলি। তার জায়গা লুফে নিয়েছে অনুশ্রী দাস। এরপর এক সাক্ষাৎকারে রুপা গাঙ্গুলি জানান, বীথি চরিত্রে চূড়ান্ত নোংরামি দেখানো হচ্ছে। এই যুগে দাঁড়িয়ে এরকম অসভ্যতা মানতে পারব না, তাই ধারাবাহিক ছেড়ে দিয়েছি। এমনকি তিনি জানান তিনি চ্যানেলকে অনুরোধ করেছিলেন চরিত্রটিকে এত নেগেটিভ না দেখানো জন্য।
রুপা গাঙ্গুলির এই অভিযোগ নিয়ে চ্যানেল চুপ থাকলেও এবার মুখ খুললেন চিত্রনাট্যকার। এবার আসল সত্য তুলে ধরলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
শুভময় বিশ্বাস জানান, “প্রথম থেকেই মেয়েবেলা বীথি চরিত্রটি এরকম। আর সেটা জানতেন রুপা গাঙ্গুলি। এমনকি প্রথমদিকেই বীথি মৌ এর জন্মদিন সেলিব্রেশানের সিকোয়েন্সে মউকে প্রায় চড় মেরে বসে। এমনকি হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিচে নিয়ে আসে, ‘অসভ্য’ মেয়ে হিসেবে আখ্যা দেয়। এত নেগেটিভ দৃশ্য প্রথম থেকেই উনি করে আসছেন। তাহলে আচমকা এরকম সিদ্ধান্ত কেন? এতদিন করলেন, এখন সমস্যা কোথায়?”
শুভময় সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও লেখেন, “এক মঙ্গলবার দুপুরে আচমকা শুটিং এঁর মাঝপথে বললেন ওনার ভালো লাগছে না শুটিং করতে। এটুকু বলে উনি বাড়ি চলে গেলেন। গোটা মেয়েবেলা ইউনিট, তার প্রতিটা সদস্য, কী ভয়ানক বিপদের মুখে পড়লো উনি একবারও ভাবলেন না। সম্প্রচারকারি চ্যানেলকে আমরা কী জবাব দেব সে কথা মনেও আনলেন না। যদিও চ্যানেল সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ….উনি কারুর কোনও কথা কানেই তুলললেন না। পরেরদিন চ্যানেল কতৃপক্ষ, মেয়েবেলার মূল রচয়িতা, প্রযোজক, পরিচালক সবাই ম্যারাথন মিটিং করলেন ওনার সাথে, ওনার বাড়ি গিয়ে। উনি সিদ্ধান্ত নিলেন না। তখন আমরা জানি না বীথি হিসেবে উনি আছেন? নাকি নেই? আমরা দোলাচলে। উনি জানাবেন বললেন। ওনাকে পরের বেশ কিছু এপিসোড লিখে লিখে পাঠানো হল, পরের গল্প পাঠানো হলো… এবং এক রাতের মধ্যে পাঠানো হলো, প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। আমিও সেই যুদ্ধের একজন সৈনিক।
উনি সবটা পড়ে, সময় নিলেন……আমরা তখন বীথিকা মিত্রকে ছাড়া কীভাবে মেয়েবেলার এপিসোড তৈরি করা যায়, সেই লড়াই করছি। টেলিকাস্ট বন্ধ হয়ে যাবে নাহলে। এত গুলো মানুষের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। মেয়েবেলা প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিলো। ইউনিটের প্রতিটা মেম্বার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলো বলে তা হয়নি। কিন্তু গল্প তো এই কারণে, বদল হবেই। সমাজ মাধ্যমে যে কথা রটছে, তার পিছনের সত্যিটা অন্তত জানা উচিত সামাজিক মানুষদের। অর্ধ সত্য, মিথ্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর। বীথিকা মিত্রের চরিত্রে অভিনয়কারী মানুষটির শুরুর থেকেই তুঘলকি আচরণ ছিল। আজ না, ভালো লাগছে না, আজ না অনেক সিন……… দিদি গো, ৭০/৮০ জন মানুষ, এবং তাদের পরিবার দু বেলা খেতে পায়, এই তোমার মেয়েবেলার জন্য। মুড সুইং এঁর জন্য ইউনিট এর কোন সদস্যের ৩ বছরের বাচ্চার দুধ বন্ধ হয়ে যায় দিদি। আপনি একটা গোটা ইউনিটকে বিপদে ফেলতে পারেন না। আপনি একদিন হঠাত বলতে পারেন না, আমি আর শুট করবো না মেয়েবেলার। এটা একটা কাজ দিদি। এত গুলো মানুষের পেট চলে এটা দিয়ে। আপনি আপনার মর্জি মত চলে গেলেন… ইউনিট এর কী হাল হলো খোঁজ নিয়েছিলেন? গোটা মেয়েবেলা ইউনিট নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলো… আমরা কেউ সরকারী চাকরী করি না।এভাবে দুম করে শুট অফ করে চলে যাওয়া যায়? আপনি যেদিন গেলেন, তারপর থেকে মেয়েবেলাকে জীবিত রাখার জন্য ইউনিটের প্রীতিটি মানুষ কী অসম্ভব এফর্ট দিয়েছে আপনি জানেন? পেটের দায় দিদি। আপনি একসাথে এত এত লোককে পথে বসিয়ে বললেন অসভ্যতা হচ্ছে গল্প নিয়ে”। আপনি আমাদের কাছে সম্মানীয় রুপা দি। কিন্তু পর্দায় তো আপনি অন্য কেউ………… আপনি নিজে এই শো এর যিনি মূল স্রষ্টা, প্রযোজক, নির্দেশক, সম্প্রচারকারী চ্যানেল…… সকলকে বললেন ছেড়ে যাওয়ার আগে, ইউনিট দারুণ। এই টিমের সাথেই আপনি ভবিষ্যতে কাজ করবেন,। নো হার্ড ফিলিংস… এই মেসেজ গুলো তো আপনারই পাঠানো। তারপর কী হলো? আপনি একটা ডেলি সোপকে প্রায় পথে বসিয়ে চলে গেলেন। তবুও কিন্তু মেয়েবেলা ইউনিট পারলো। আর সেটাই কী আপনার খারাপ লাগলো? আপনার বদলে অনুস্রি দাস এলেন। শুধু এলেন না… এলেন…………দেখলেন এবং মেয়েবেলাকে পুনরুজ্জীবিত করলেন। এটাই কী আপনার সত্তাকে আঘাত করলো?