ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রী কৃষ্ণ, যিনি হিন্দু সমাজে দেবতা রুপে পূজিত হন। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা অল্প বিস্তর আমরা সকলেই জানি। এমনকি শ্রীমদ ভগবত্ গীতায় উল্লেখিত শ্রীকৃষ্ণের বাণী আজও জীবনে চলার সঠিক পথের সন্ধান দেয়। শ্রীকৃষ্ণের দেখানো পথ সঠিক ভাবে অনুসরণ করলে প্রতিটি মানুষ জীবনে উন্নতি করতে সমর্থ হবে। ধর্ম, কর্ম ও প্রেম – জীবনের এই তিনটি প্রধান স্তম্ভ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয় শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া উপদেশ গুলি। আজকের প্রতিবেদনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী নিয়ে উক্তি ও শ্রীকৃষ্ণের বলা কয়েকটি অতি মূল্যবান উপদেশ তুলে ধরা হল, যা কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের সাহস যোগাবে।
আরও পড়ুনঃ ভগবত গীতার নির্বাচিত কিছু বাণী
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অমৃত বাণী:
যা হয়েছে, ভালোর জন্যই হয়েছে। যা হচ্ছে ভালোর জন্যই হচ্ছে। যা হবে তা ভালোর জন্যও হবে। তাই ভবিষ্যৎ এ কি হবে তাই নিয়ে না ভেবে বর্তমানে পরম আনন্দে বাঁচতে শেখো।
সময় কখনই থেমে থাকে না, আজ যদি পরিস্থিতি খারাপ হয় তবে আগামীকাল অবশ্যই ভালো হবে।
মানুষ প্রায়ই সত্য বলতে এড়িয়ে যায় বা ভয় পায়, কিন্তু সত্য কখনো লুকানো যায় না বা মুছে যায় না। আপনি যতই আড়াল করুন না কেন, সত্য অবশ্যই উন্মোচিত হবে।
কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে তার প্রতি আসক্তি বাড়ে। মনে রাখবে, আসক্তি কামনার জন্ম দেয় এবং কামনা ক্রোধের জন্ম দেয়। ক্রোধ সম্মোহন ও অবিবেচনার জন্ম দেয়।
জীবনে অমরত্ব পেতে সন্মান অর্জন করো, কারণ জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও অর্জিত সন্মান সর্বদা চিরস্থায়ী হয়।
আরও পড়ুনঃ রইল মহাভারতের বিশেষ উক্তি ও শ্রী কৃষ্ণের শাশ্বত বাণী
শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন, কেউ তোমাকে কষ্ট দিলে খারাপ মনে করো না, কারণ মানুষ শুধু সেই গাছেই পাথর ছুড়ে মারে যার ফল মিষ্টি হয়।
কেবল মাত্র স্বার্থ ত্যাগই হল আনন্দ ও সন্তুষ্টির এক মাত্র সহজ পথ।
সময় কখনও মানুষের নির্দেশিত পথে চলে না, বরং মানুষকে সময়ের নির্দেশিত পথে চলতে হয়।
সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে সঠিক কাজ সম্পূর্ণ করাই আমাদের জীবনের পরম সাফল্য।
সততার সাথে কর্ম করতে জীবনে বহু বাধার সন্মুখিন হতে হবে, কিন্তু ধৈর্য রাখলে অবশেষে জয় তোমারই হবে।
সন্দেহ করা মানুষের প্রসন্নতা পাওয়া- না এই জীবনে সম্ভব আর নাই অন্য কোন জীবনে।
আরও পড়ুনঃ 80 টি জীবনে সাফল্যের উক্তি । মোটিভেশনাল বার্তা
যে ব্যক্তির মধ্যে অহংকারের মাত্রা যত বেশি, তার জ্ঞানের পরিধি ততই কম।
যা ঘটতে চলেছে তা ঘটবেই, আর যা ঘটবে না তা কখনই ঘটবে না, এইরকম নিশ্চয়তাপূর্ণ মনোভাব যার মধ্যে আছে, তাকে দুশ্চিন্তা কোনভাবেই কষ্ট দিতে পারে না।
কোন ঘটনায় ভয়প্রাপ্ত মানুষ সর্বদাই পরাজিত হয়। আর যে মানুষ সব হারিয়েও শান্ত ও একাগ্র থাকে সেই আসল জয়ী।
শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের বাণী:
মানুষ তাকেই ভালোবাসা দিতে পারে, যে তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
প্রেম উন্নতি দেয়, উচিৎ অনুচিৎ -এর জ্ঞান দেয়।
সর্বদা মনে রাখবে, পৃথিবীতে প্রেমের চেয়ে মধুর আর কিছু নেই।
প্রেমের জন্ম করুণা থেকে হয়, আর মোহের জন্ম অহংকার থেকে।
যদি হৃদয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা থাকে তবে অপেক্ষা করার প্রতিটা মুহূর্ত আনন্দ দেয়।
আরও পড়ুনঃ ৬০ টি সেরা অতীত নিয়ে উক্তি ও অনুপ্রেরণামূলক স্ট্যাটাস
প্রেম ধর্ম আর মোহ অধর্ম।
সত্যিকারের ভালোবাসার কোন শেষ তারিখ হয় না।
যখন প্রেমের সাথে শ্রদ্ধার অনুভূতি যুক্ত হয়, তখন প্রেম ভক্তির সমানে পরিণত হয়।
ভালোবাসা আত্মার সাথে হওয়া উচিত শরীরের সাথে নয়, শরীরের প্রতি যা থাকে তা কেবল আকর্ষণ আর আত্মার প্রতি যা থাকে তা শুধুই অনন্ত প্রেম।
প্রেমের অর্থ কাউকে সন্ধান করা নয়, বরং তাতে হারিয়ে যাওয়া।
আরও পড়ুনঃ বিখ্যাত সদগুরুর উক্তি । মূল্যবান বাণী । উপদেশ
শ্রীকৃষ্ণ কথা:
আমার কাছে কেউ বিদ্বেষী বা প্রিয় নয়, কেউ গরীব নয় কেউ ধনী নয়, যারা আমাকে ভক্তিভরে স্মরণ করে, আমি তাদের এবং তারা আমার।
যুদ্ধ হোক বা জীবন, সাফল্য তিনটি অস্ত্রেই অর্জিত হয়: ধর্ম, ধৈর্য ও সাহস।
স্বার্থপরতা থেকে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন, তা কখনই স্থায়ী হয়না। আর ভালোবাসায় গড়া সম্পর্ক গুলো যতই ভাঙার চেষ্টা করুন না কেন, তা কখনই ভাঙা যায় না।
সত্যের উপর ভিত্তি করে যাই হোক না কেন তা করতে বা বলতে এবং বিশ্বাস করতে কখনও ভয় পাওয়া উচিত নয়।
তোমার কর্ম ও উদ্দেশ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তোমার বিপক্ষে থাকলেও জানবে ঈশ্বর তোমার পক্ষেই আছে।
বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধি হল মানুষের পরম সম্পদ যা সঠিক সময়ে জীবনে সঠিক দিশা বেছে নিতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ 40 টি সেরা স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী
মানব জীবনের চিরন্তন সত্য হল মৃত্যু, যা প্রতিটা মানুষের জীবনেই নির্ধারিত।
যে মেঘ গর্জায় সেই মেঘ খুব কমই বর্ষায়। ঠিক তেমনই প্রকৃত সাহসীরা অকারণে তাদের বাক্য ব্যয় করে না।
সত্যই পরম ধর্ম।
যখনই সত্যের সাথে অসত্যের লড়াই হয়, তখন সত্য সর্বদা একা দাঁড়ায় আর অসত্যের বাহিনী হয় বিশাল। কারণ তার পিছনে মূর্খ, লোভী, স্বার্থপর ও বিশ্বাসঘতকেরা থাকে।
দুর্বলরাই কেবল ভাগ্যকে দোষারোপ করে আর সাহসীরা ভাগ্যকে অর্জন করে।
আরও পড়ুনঃ জীবনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে উক্তি, মোটিভেশনাল কিছু কথা
জীবনে আসা অন্ধকারময় সময়ই হল জীবনে আশার আলোর পথপ্রদর্শক।
গীতায় বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের শাশ্বত বাণী:
সুখের একমাত্র চাবিকাঠি হল নিজের কামনার উপর নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা।
অতিরিক্ত ক্রোধ মানুষের বুদ্ধিকে গ্রাস করে, লোভ মনুষ্যত্বকে গ্রাস করে, চিন্তা আয়ুকে গ্রাস করে।
প্রজ্বলিত অগ্নি যেমন জ্বালানি কাঠকে ছাইতে পরিণত করে ঠিক তেমনভাবে আমাদের জ্ঞানের আলো আমাদের মনের মধ্যে থাকা সমস্ত আত্ম অহংকার কে ছাইতে পরিণত করে।
যে ব্যক্তির মন তার শত্রু এবং বন্ধুদের মধ্যে সম্পূর্ণ ভেদাভেদ হীন, কেবল মাত্র তিনিই পরম শান্তির অধিকারি।
নিস্বার্থ সেবার মাধ্যমে, আপনি সর্বদা ফলপ্রসূ হবেন এবং আপনার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পাবে।
নিজের মন কে সর্বদা কর্মের উপর স্থির করো, কর্মফলের উপর নয়।
আরও পড়ুনঃ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উক্তি যা সকলের চিন্তাভাবনা বদলে দেবে
মানুষের কামনা ও বাসনাই হল প্রভূত দুঃখের প্রধান কারণ।
জন্মের সাথেই মানুষের মৃত্যু নির্ধারিত, তাই নিজের কর্ম করো যা অনিবার্য তার জন্য দুঃখ করো না।
খালি হাতে এসেছ খালি হাতে চলে যাবে, আজ যা তোমার আছে কাল তা অন্য কারোর হবে, আজ যা কিছু নিয়ে অহংকার করছ কাল সেটাই তোমার দুঃখের কারণ হবে।
জীবনে সমস্যা আসা মানেই থেমে যাওয়া নয়, সমস্যার আসল অর্থ নতুন কিছু শিখে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
নরকের তিনটি দরজা রয়েছে: কাম, ক্রোধ এবং লোভ।
সুখ হল মনের অবস্থা, যার সাথে বাহ্যিক বিশ্বের কোন মিল নেই।
সঠিক সময়ে সঠিক শব্দ চয়ন যেমন অচেনা মানুষকেও আত্মীয়তার সম্পর্কে আবদ্ধ করতে পারে ঠিক তেমন ভাবেই কিছু ভুল শব্দ চয়ন পরম আত্মীয়কেও পরম শত্রু তে পরিণত করতে পারে।
বাহ্যিক বস্তুর ত্যাগকে বাস্তবে ত্যাগ বলে না। আন্তরিক ত্যাগই হচ্ছে প্রকৃত ত্যাগ।
আরও পড়ুনঃ জীবনে একলা চলা নিয়ে উক্তি
শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ:
জীবনে কর্ম করে যাও, ফলের আশা করো না।
জীবনে লক্ষ্য স্থির রাখা জরুরি, কারণ লক্ষ্য হীন জীবন মানুষ কে ভুল পথে চালিত করে।
কর্ম করার আগে আমাদের কর্মের প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে, তবেই সেই কর্মকে আনন্দের সাথে সম্পূর্ণ করা সম্ভব।
সৎ চরিত্রের মানুষের হৃদয় সর্বদা শান্ত থাকে, পরিস্থিতি কখনই তার সুখের বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। সমাজে তার সন্মান অক্ষত থাকে সর্বদা।
যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা আমাদের কষ্ট থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কষ্টের পথ কখনও শেষ হবে না।
আত্মা অমর, তাই মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করো না।
জীবনে যত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাবে, ততই তোমার ব্যক্তিত্ব প্রখর হবে।
কর্মের মাধ্যমেই ধর্ম সাধিত হয়, কর্ম ছাড়া ধর্মের কোনো সংজ্ঞা নেই।
সময় হল সর্ব শক্তিমান, তাই কখনও সময় নষ্ট করো না।
তোমার যা করণীয় তাই করো, কিন্তু অহংকার দিয়ে নয়, লালসা নয়, হিংসা নয়, ভালোবাসা, মমতা, নম্রতা ও ভক্তি দিয়ে।
আরও পড়ুনঃ বেস্ট 50 টি হার না মানা নিয়ে উক্তি । স্ট্যাটাস । ক্যাপশন
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তরঃ
Q. ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কেন প্রেমের প্রতীক বলা হয়?
A. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া শিক্ষা সকল প্রাণীর প্রতি ভালবাসা ও দয়ার প্রচার করে। প্রেমকে কৃষ্ণের ঐশ্বরিক প্রকৃতির একটি কেন্দ্রীয় দিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়, আর তাই তিনি প্রায়শই তার ভক্তদের সাথে প্রেমময় সম্পর্কে জড়িত। তিনি তার কর্ম ও শিক্ষার মাধ্যমেই সকলের মাঝে প্রেম ও আনন্দ ছড়িয়েছেন।
Q. ভগবদ্গীতা অনুসারে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনকে কি বার্তা দিয়েছিলেন?
A. ভগবদ্গীতায়, ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনকে গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রদান করেন। সেইসাথে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পথ, যার মধ্যে নিঃস্বার্থ কর্ম এবং অটল ভক্তি জড়িত।
Q. কোন তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়?
A. ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মধুরায় কংসের কারাগারে মাতা দেবকীর অষ্টম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তার এই জন্মদিনটিকে জন্মাষ্টমী বলা হয়।
Q. ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কোন দেবতার অবতার রুপে জানা যায়?
A. ভগবদ্গীতা অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে তাকে স্বয়ং ভগবান এবং বিষ্ণুর পূর্ণাবতার হিসাবেও মনে করা হয়।