ভ্রমণ স্থানঃ পুরী
দেশঃ ভারত
রাজ্যঃ উড়িষ্যা
জেলাঃ পুরী
ভাষাঃ ওড়িয়া
ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত পুরী একটি প্রাচীন মন্দির শহর। উড়িষ্যা রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে পুরী শহরটি ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত। হিন্দুদের কাছে পুরী একটি তীর্থস্থান। দীঘার চেয়ে পুরীর সমুদ্র অনেক বড়। এই বিশাল সমুদ্রের মজা উপভোগ করতে এবং তীর্থ করতে প্রচুর মানুষের ভিড় পড়ে এই স্থানটিতে। রথের দিনে হাজার হাজার ভক্তদের আগমন দেখা যায়।
এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় জগন্নাথ দেবের মন্দির। বিশাল বড় এই মন্দিরের সৌন্দর্য এবং পূজা- পার্বণ মানুষের মন আকর্ষণ করে। শুধুমাত্র সমুদ্র জন্য নয়, সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি পুরীতে ভ্রমণের প্রচুর জায়গা থাকায় সারা বছর মানুষের আনাগোনা চলে এই শহরে। চলুন আজ জেনে নিই পবিত্র তীর্থস্থান পুরী ভ্রমণের সম্পর্কে কিছু তথ্য।
লোকেশন (Location)
পুরী উড়িষ্যা রাজ্যের বাংলার উপকূলে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত পুরী। কলকাতা থেকে প্রায় ৫১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কলকাতা থেকে পুরী যেতে সময় লাগে ৮-৯ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন । মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত/ লোকেশন/ যোগাযোগ ব্যবস্থা/ ভ্রমণের স্থান
পুরীর আবহাওয়া (Puri weather)
পুরীর আবহাওয়া গ্রীষ্মকালে প্রায় সর্বাধিক ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস মতো থাকে এবং শীতকালে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। এখানে গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ২৬.৯ ডিগ্রি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা (Communication system)
- বাসের পরিষেবা (Bus service)
কলকাতা থেকে পুরী যাওয়ার জন্য বাস অথবা ট্রেনের সুবিধা রয়েছে। কলকাতা থেকে পুরী যাওয়ার জন্য এখন অনেক বাসের পরিষেবা দেওয়া হয়েছে এবং আপনি বাসে ভ্রমণ করতে চান তাহলে আপনার পুরী যেতে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টার মতো। এসি বাসের সুবিধা রয়েছে।
- ট্রেন পরিষেবা (Train service)
কলকাতা থেকে পুরী যাওয়ার জন্য প্রচুর ট্রেনের সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে এসি ট্রেনেরও সুবিধা। কলকাতা থেকে পুরী পৌঁছাতে ট্রেনে সময় লাগবে ৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।
- বিমান পরিষেবা (Airline)
আপনি ফ্লাইটেও পুরী যেতে পারেন। কলকাতা থেকে আপনাকে ফ্লাইটে ভুবনেশ্বর যেতে হবে এবং সেখান থেকে বাস করে পুরী যেতে হবে।
আরও পড়ুন । দীঘাঃ দীঘা ভ্রমণ, সমুদ্র সৈকত, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
ভ্রমণের স্থান (Traveling place)
-
পুরীর সমুদ্র (Sea of Puri)
বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত পুরী একটি সুবিশাল সমুদ্র। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় সৈকতগুলির মধ্যে একটি হল পুরীর সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র স্নান করার মজা উপভোগ করার জন্য পুরী অতুলনীয়। বিভিন্ন সময়ে একাধিক পর্যাটকের ভিড় উপচে পড়ে এই সমুদ্র সৈকতে। সকালে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অপূর্ব দৃশ্য এবং অগভীর সমুদ্রের জলরাশি পাশাপাশি সুন্দর পরিবেশ পর্যাটকদের মন ছুঁয়ে যায়।
-
জগন্নাথ মন্দির (Jagannath Temple)
জগন্নাথ মন্দির ভারতে প্রধান হিন্দু মন্দিরগুলি মধ্যে একটি। মন্দিরের প্রধান দেবতা জগন্নাথ, যিনি ভগবান বিষ্ণুর একটি রূপ। পুরীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল এই জগন্নাথ দেবের মন্দির। বিশাল জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এই মন্দির। এই মন্দিরে সৌন্দর্যের টানে এবং পূজা দিতে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তের সমাগম দেখা যায়।
পুরীতে মানুষ ঘুরতে গেলে জগন্নাথ দেবের দর্শন না করে থাকতে পারেন না। এই মন্দিরটি খুব জাগ্রত এবং অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই মন্দিরের পেছনে যা অবিশ্বাস্য। কথায় আছে পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষিত জিনিস মন্দিরের উপর পতাকা। মন্দিরের মাথার চূড়ার উপর যে পতাকা লাগানো রয়েছে তা হওয়া দিলে হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে। শোনা যায় এই জগন্নাথ দেবের মন্দিরের উপর থেকে আজও কোন পাখি বা বিমান উড়ে যেতে পারে না। পাশাপাশি মন্দিরের হেঁশেল বেশ আকর্ষণীয়।
জগন্নাথ মন্দিরের স্থাপত্য, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব এটি পুরির প্রধান পর্যটক আকর্ষণ করে। হাজার হাজার ভক্ত দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে এখানে দেবদেবীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে।
3. চিল্কা লেক (Chilka Lake)
পুরীতে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই ঘুরে আসুন চিল্কা লেক থেকে। পুরী, খুরদা এবং গঞ্জাম এই তিনটি জেলাকে ঘিরে ১১০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান করছে এই হ্রদ। মিষ্টি জলের হ্রদ হল চিল্কা। চিল্কায় ভিন্ন ধরণের জলচর প্রাণী, কাঁকড়া এবং মাছ দেখা যায়। শীতেকালে যদি এখানে ঘুরতে যান দেখতে পাবেন প্রচুর পরিযায়ী পাখি। পাশাপাশি চিল্কা লেকের ধারে সাতপাড়ায় দেখতে পাবেন ডলফিনের খেলা।
আরও পড়ুন । কক্সবাজার ট্র্যাভেল গাইড/ বাংলাদেশ
-
নরেন্দ্র ট্যাংক (Narendra Tank)
১৫ তম শতাব্দীতে নির্মিত ১৬ টি ঘাট সহ উড়িষ্যার বৃহত্তম ট্যাংক ট্যাংক নরেন্দ্র ট্যাংক। এই ট্যাংক ঘিরে রয়েছে অনেক ছোট এবং বড় মন্দির। এটি একটি পবিত্র পুষ্করিণী। এটি চন্দনা পুষ্করিণী নামে পরিচিত।
-
পুরি গুন্ডিচা মন্দির (Puri Gundicha Temple)
পুরি গুন্ডিচা মন্দির একটি জনপ্রিয় মন্দির যা পুরী শহরকে আকর্ষণীয় করে তোলে। এটি জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি হিসাবে খ্যাত। মন্দিরটি চারপাশে বাগান দ্বারা আবৃত এবং এটি জগন্নাথ মন্দির থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
রথের দিন জগন্নাথ দেব দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে মাসির বাড়ি গুন্ডিচা যান আবার রথের ৭ দিন পরে সেখান থেকে জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ফিরে আসেন। রথযাত্রার দিনে জগন্নাথের মাসির বাড়ি যাওয়ার এই দৃশ্য দেখার জন্য পুরীতে হাজার হাজার ভক্তের ভিড় পড়ে। পুরীতে ঘুরতে গেলে দর্শনার্থীরা জগন্নাথ দেবের মন্দির এবং তার মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে অবশ্যই পরিদর্শন করতে যান।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন উত্তরঃ
Q. পুরী কিসের জন্য বিখ্যাত?
A. পুরী জগ্ননাথ দেবের মন্দির এবং সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত।
Q. পুরীতে কোথায় কোথায় ভ্রমণ স্থান রয়েছে?
A. পুরীর সমুদ্র, জগন্নাথ মন্দির, চিল্কা লেক, নরেন্দ্র ট্যাংক, পুরি গুন্ডিচা মন্দির ভ্রমণ স্থান রয়েছে।
Q. কলকাতা থেকে পুরীতে কীভাবে ভ্রমণ করা যায়?
A. কলকাতা থেকে পুরীতে যাওয়ার জন্য বাস বা ট্রেনের যাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
Q. বিমানে পুরী কীভাবে যাব?
A. কলকাতা থেকে আপনাকে ফ্লাইটে ভুবনেশ্বর যেতে হবে এবং সেখান থেকে বাস করে পুরী যেতে হবে।