রহস্যময় ভূতের গল্প । Bengali Horror Story

ভূতের গল্প

ভূতের গল্প এর প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরকালীন। এখনও ভুতের গল্প পেলে আট থেকে আশি আনন্দে উৎসাহিত হয়ে পড়ে। যারা রহস্যময় ভূতের গল্প পড়তে ভালবাসেন তাদের জন্য আজকের ভূতের গল্পটি পড়ার অনুরোধ রইল।

ভিত রহস্য

পরিবারে মাত্র তিন জন সদস্য। অনিকেত ও তার বাবা-মা। পড়াশোনা শেষ করার অনেকবছর পর অবশেষে সরকারি চাকরি পেল অনিকেত। প্রতিদিন সকালে উঠে অনিকেত চাকরিতে যায়, সন্ধ্যে হয়ে যায় ফিরতে ফিরতে। ওদের একটা বাড়ি আছে, কাঁচা বাড়ি। বৃষ্টি হলে চাল দিয়ে জল পড়ে, ঘরের ভেতর ভিজে যায়।

দু’বেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করে, রনির পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়েই ঘর ঠিক করার সামর্থ্য কুলায়নি অনিকেতের বাবার। তাই অনিকেতের ইচ্ছা ছিল নতুন চাকরি পেয়ে পাকা বাড়ি করার। একদিন অফিসের এর কলিগ বুদ্ধি অনিকেতকে দেয়। অনিকেতদের বাড়ির জায়গাটা বেশ কম। তাই লোন নিয়ে অনিকেত একটা নতুন জায়গা কেনে ঐ কলিগের বুদ্ধিতে।

জায়গাটা শহর থেকে অনেকটাই দূরে। সেজন্য দামটাও অনেকটা কমেই পেয়ে গেলো। এবার বাড়ি তৈরির স্বপ্ন সফল হবে অনিকেতের।

ঠিক হয় ভিত করেই বাড়ি করবে। ভিতপুজো হবার পর যথারীতি ভিতের মাটি কাটা শুরু হয়। তিন দিন মাটি কাটার পর, ভিতের মাটি কাটার সময় মাটির নীচে কিছু একটা শক্ত জিনিস কোদালে ঠেকে। ভাল করে দেখার পর একটা অদ্ভুত জিনিস নজরে আসে। অনিকেতের বাবা দাঁড়িয়ে দেখছেন। এমন সময় কোদালের মাটির তালের সঙ্গে কি একটা শক্ত সাদা জিনিস উঠে এলো।

তখনই অনিকেতের বাবা মাটির তল থেকে জিনিসটা বের করে জল দিয়ে ধুলেন। তারপর তো তার চক্ষু চড়কগাছ। এ যে মানুষের হাতের হাড়। এই ঘটনা কাউকে না জানিয়েই পরের দিন অনিকেতের বাবা সেই জিনিসটাকে নিয়ে একটা লোকের কাছে যায়।

কয়েকদিন কেটে যায়। বাড়ির ভিত কাটা কমপ্লিট। গাঁথুনি শুরু হয়েছে। বেশ কিছুটা গাঁথুনিও হয়ে গেছে। হঠাৎ অনিকেতের বাবা প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে চেহারায় ভাঙ্গন ধরে, শীর্ণকায় হতে থাকে ওনার শরীর। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই অনিকেতের বাবার সারা শরীর ঠাণ্ডা, হৃদস্পন্দনও পাওয়া যাচ্ছে না।

দেখতে দেখতে দিন এগিয়ে চলে। নতুন বাড়ির স্বপ্ন বন্ধ। বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। হঠাত একদিন অনিকেতের বাবা স্বপ্নে আসেন। অনিকেতকে সেদিনের মানুষের হাড় পাওয়ার ঘটনাটি বলেন। এমনকি উনি কোথায় গিয়েছিলেন, তাও জানান অনিকেতকে।

বাবা যেমন বলেছিলেন, সেই অনুযায়ী অনিকেত সেই নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছায়। জায়গাটার এক অদ্ভুত পরিবেশ, দিনেরবেলায় তাও গা ছমছমে!এক তান্ত্রিক বসে আছেন এক বিশাল বটগাছের নিচে। অনিকেত ভয়ে ভয়ে তার কাছে এগিয়ে যায়।

কি ব্যাপার? বল বাবা!, উনি জিগ্গেস করলেন অনিকেতকে।অনিকেত তখন ওর বাবার চেহারা এবং ঘটনাটির কিছু বর্ণনা দিতে ঐ তান্ত্রিক বুঝতে পারেন। অনিকেতকে কাছে ডেকে বলেন,

দেখ বাবা! তোর বাবা যে জিনিসটি নিয়ে এসেছিলেন,সেটি কোনো এক মৃত মানুষের হাতের হাড়। তোরা যে জায়গায় বাড়ি করছিস,সেটা মোটেই ভালো জায়গা নয়। ওর পাশে যে শুকনো জলা জায়গাটা আছে ওটা আগে একটা খাল ছিল।

অনিকেত জানতে চায়, জায়গাটা ভালো নয় কেন? তান্ত্রিক বলেন, ঐ খালটা আর তোদের কেনা জায়গাটার
আশেপাশে ছিল কবরখানা। ঐ হাড়টা কোনোভাবে মাটির নীচে চাপা পড়ে যাওয়া কোনো অপঘাতে মৃত্যু হওয়া শরীরের। তোর বাবা যখন ঐ হাড়টা নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন, তখনই আমি গোটা ব্যাপারটা খুব সহজেই বুঝতে পেরেছিলাম। শুধু তাই নয়, উনি যে বেশিদিন আর বাঁচবেন না,তাও আমি জানতাম, কিন্তু ওনাকে কিছু বলিনি।

অনিকেত সব শুনে অবাক। ওনাকে বলে, এখন তাহলে আমি ঠিক কি করবো? ঐ তান্ত্রিক অনিকেতকে আশ্বস্ত করে বলেন, তোর বাবা নিজের হাতে ঐ হাড় স্পর্শ করেছিলেন, তাই আমিও পারিনি ওনাকে বিপদ
থেকে বাঁচাতে। তুই চিন্তা করিস না। আগামী শনিবার অমাবস্যা, ঐদিন আমি ছদ্মবেশে তোর ঐ জায়গায় গিয়ে কিছু ক্রিয়াকলাপ করে দিয়ে আসবো। কিন্তু ঐ জায়গায় তুই ছাড়া আর কেউ যেনো না থাকে।

শনিবার দিন, ঠিক বেলা বারোটায় ঐ তান্ত্রিক আসেন, কাঁধে ঝোলা,পুরোপুরি ভিখারির ছদ্মবেশ। উনি এসে কিছু মন্ত্রপূত জিনিস অনিকেতদের বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দেন। বাড়িটার মাঝে বসে কিছু ক্রিয়াকলাপও করেন। এমন সময় অনিকেত দেখতে পায়, ওদের বাড়ির পেছনে থাকা তেঁতুল গাছটার বড় একটা কাঁচা ডাল আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ছে। অনিকেত খুব ভালো করে দেখে, না আশেপাশে কেউ রয়েছে, না গাছের ওপরে। এদিকে ঐ তান্ত্রিকের মন্ত্রোচ্চারণ চলছে। একসময় ডালটি পুরোটাই মাটিতে ভেঙ্গে পড়ে,
তান্ত্রিক চিৎকার করে বলে ওঠেন, যা! এবার মুক্তি।