মহাকুম্ভ মেলা 2025, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ ঘিরে এখন উৎসবের আমেজ। আর এই ঐতিহাসিক উৎসবেই পা মিলিয়েছেন ৪০ কোটিরও বেশি ভক্ত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলা মহাকুম্ভ শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি থেকে আর শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রিতে। টানা ৪৫ দিন ধরে চলবে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
প্রয়াগ তীর্থে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গমে সর্বত্যাগী সাধু-সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী সহ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই একবার হলেও পুণ্যলাভের আশায় আসে কুম্ভের স্নানযাত্রায়। কথিত আছে এই মহাকুম্ভের সময় এই সঙ্গমের জলে স্নান করলে পূণ্যপ্রাপ্তি হয় ও পাপ ধুয়ে যায় বলে মনে করা হয়। নদীর তীরে পালিত হয় নানান ধর্মীয় আচার।
এমন অনেকেই আছেন যারা অংশ নিতে চাইছেন এই মহাকুম্ভের পুণ্যলগ্নের স্নানযাত্রায়, তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না কিভাবে যেতে হবে, মহাকুম্ভের স্নানের সঠিক সময়, থাকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত নানা বিষয়। সেই সমস্ত সকল পুণ্যার্থীদের জন্য আজকের প্রতিবেদনে রইল মহাকুম্ভ মেলা 2025 এর সম্পূর্ণ ভ্রমণ গাইড।
আরও পড়ুনঃ পুরীর জগন্নাথ মন্দির । তীর্থস্থান । ওড়িশা
১) মহাকুম্ভ মেলা কেন পালিত হয়?
বহু বছরের সুপ্রাচীন কুম্ভ মেলার ইতিহাস। সমুদ্র মন্থনের পর থেকেই কুম্ভমেলা আয়োজিত হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। মহাকুম্ভ সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, অমৃত প্রাপ্তির জন্য যখন দেবতা ও অসুরদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল তখন অমৃত কলশ প্রাপ্ত হয়েছিল। আর সেই সময় অমৃত কলশ থেকে কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়েছিল বিশেষ চারটি স্থানে। যার মধ্যে রয়েছে প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী, নাসিক। আর তার পর থেকেই এই চারটি স্থানে মহাকুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়।
শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রয়াগরাজকে মহা পুণ্যভূমি বলা হয়। কথিত আছে স্বয়ং ব্রহ্মা এই স্থানে যজ্ঞ করেছিলেন। ধর্মীয় গ্রন্থেও এর উল্লেখ রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী ১২দিন অমৃত পাওযার জন্য দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। আর এই ১২ দিনই মানুষের কাছে ১২ বছরের সমান। তাই প্রতি ১২ বছরে একবার মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়।
২) মহা কুম্ভ মেলার সময়কাল
মহাকুম্ভ মেলা, পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। যেখানে প্রতি ১২ বছর পর একাধিক আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান এবং পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দেওয়ার জন্য দূরদূরান্ত থেকে কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয় এই মেলায়।
ভারতে মোট তিন ধরনের কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়: অর্ধ কুম্ভ মেলা, পূর্ণ কুম্ভ মেলা এবং মহা কুম্ভ মেলা। অর্ধ কুম্ভ মেলা প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদ) এবং হরিদ্বারে প্রতি ৬ বছরে পালিত হয়। প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদ), হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিক এই চারটি স্থানে প্রতি ১২ বছরে পূর্ণ কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। মহা কুম্ভ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর একবার হয়। শুধুমাত্র প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদে) আয়োজন করা হয় এই মেলার।
আরও পড়ুনঃ কেদারনাথ মন্দির । তীর্থস্থান । উত্তরাখণ্ড
স্নানের সময়
মহাকুম্ভে শাহী স্নানের জন্য বেশকিছু নিয়ম অনুসরণ করা হয়। মহাকুম্ভে প্রথমেই স্নান করেন নাগা সাধুরা। এরপরেই গৃহস্থদের স্নান করার নিয়ম রয়েছে। মহা কুম্ভের সময় ছয়টি শুভ স্নানের দিন রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি প্রধান শাহী স্নান এবং তিনটি অতিরিক্ত স্নানের দিন রয়েছে:
13 জানুয়ারী, 2025: পৌষ পূর্ণিমা
14 জানুয়ারী, 2025: মকর সংক্রান্তি (প্রথম শাহী স্নান)
29 জানুয়ারী, 2025: মৌনী অমাবস্যা (দ্বিতীয় শাহী স্নান)
3 ফেব্রুয়ারি, 2025: বসন্ত পঞ্চমী (তৃতীয় শাহী স্নান)
12 ফেব্রুয়ারি, 2025: মাঘী পূর্ণিমা
26 ফেব্রুয়ারি, 2025: মহা শিবরাত্রি
৩) কুম্ভ মেলায় কীভাবে যাবেন?
ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী ভিড় জমেছে প্রয়াগরাজের মহা কুম্ভমেলায়। তবে যারা এখন ভাবছেন এই ধর্মীয় সমাবেশে অংশ নিতে কিন্তু কিভাবে যাবেন বুঝতে পারছেন না, তাহলে আজকের প্রতিবেদন সেই সকল ভক্তদের জন্য।
কলকাতা থেকে কুম্ভমেলা যাওয়ার রুট
প্রয়াগরাজ জংশন হল উত্তর ভারতের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশনগুলির মধ্যে একটি, যেখানে দিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা সহ সমস্ত বড় শহর থেকে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করে।
ট্রেনে করে যেতে হলে উত্তরপ্রদেশের সরাসরি ট্রেন পাওয়া যাবে। হাওড়া থেকে যেমন চম্বল এক্সপ্রেস, পূর্বা এক্সপ্রেস, এবং বিভূতি এক্সপ্রেস করে চলে যাওয়া যাবে।
প্রয়াগরাজ্যে স্টেশনে নেমে বাসে কিংবা গাড়িতে করে একঘন্টার রাস্তা। তারপরেই পৌঁছান যাবে কুম্ভ মেলায়। অন্যভাবে শিয়ালদহ থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস, নেতাজি এক্সপ্রেস ও মুম্বই মেলে করেও যাওয়া যাবে মহাকুম্ভে।
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে উত্তরপ্রদেশের বামরৌলি বিমানবন্দরের সরাসরি প্লেন পাওয়া যাবে। যেখানে খুব কম সময়ের মধ্যেই কুম্ভ মেলায় পৌঁছান সম্ভব হবে।
আপনি যদি বাসে কিংবা গাড়িতে মহাকুম্ভের মেলায় যেতে চান, NH-2 এবং NH-19 হল জাতীয় মহাসড়ক যা সরাসরি প্রয়াগরাজে পৌঁছায়।
দিল্লি থেকে কুম্ভমেলা যাওয়ার রুট
প্রয়াগরাজের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল প্রয়াগরাজ জংশন (পূর্বে এলাহাবাদ জংশন), যা উত্তর ভারতের অন্যতম ব্যস্ত এবং সবচেয়ে ভালোভাবে সংযুক্ত স্টেশন। সেক্ষেত্রে দিল্লি থেকে সরাসরি ট্রেন রয়েছে প্রয়াগরাজে পৌঁছানোর জন্য।
দিল্লি এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি পৌঁছে যান প্রয়াগরাজ রাজ্যের বামরৌলি বিমানবন্দরে। সেখান থেকে গাড়িতে কিংবা বাসে কয়েক ঘন্টার দুরত্বেই পৌঁছে যেতে পারেন কুম্ভের সঙ্গমস্থলে।
সড়কপথে দিল্লি থেকে প্রয়াগরাজ যেতে হলে NH19 হয়ে প্রায় ৭০০ কিমি দুরত্বেই সরাসরি পৌঁছান যায়। সময় লাগে প্রায় ১১ ঘন্টা।
আরও পড়ুনঃ কেদারনাথ মন্দিরে কিভাবে যাবেন?
হায়দ্রাবাদ থেকে কুম্ভমেলা যাওয়ার রুট
হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পৌঁছে যান প্রয়াগরাজ বিমান বন্দরে। সেখান থেকে কয়েক ঘন্টার দুরত্বে সহজেই অংশগ্রহন করতে পারেন কুম্ভের মেলায়।
হায়দ্রাবাদ থেকে যেকোন ট্রেনেই পৌঁছে যান প্রয়াগরাজ জংশন। স্টেশনে নেমে বাসে কিংবা গাড়িতে করে একঘন্টার রাস্তা। তারপরেই পৌঁছান যাবে কুম্ভ মেলায়।
মুম্বাই থেকে কুম্ভমেলা যাওয়ার রুট
মুম্বাই থেকে ট্রেনপথে মহানগরী এক্সপ্রেস এবং কামায়ানী এক্সপ্রেস করে সহজেই পৌঁছাতে পারেন প্রয়াগরাজ।
প্রয়াগরাজ দেশের সমস্ত বড় শহরের সাথে আকাশপথে সংযুক্ত। প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ মেলা শহর থেকে নিকটতম বিমানবন্দর হল প্রয়াগরাজ বামরাউলি বিমানবন্দর। মুম্বাই এয়ারপোর্ট থেকে বামরৌলি বিমানবন্দরের সরাসরি প্লেন পাওয়া যাবে। এছাড়াও, আপনি বারাণসী, অযোধ্যা এবং লখনউ বিমানবন্দরে আসতে পারেন, তবে সেখান থেকে আপনাকে ট্রেন বা সড়কপথে প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ মেলায় পৌঁছাতে হবে।
প্রয়াগরাজ পৌঁছানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় বাসই বুকিং করতে পারেন। কিংবা নিজস্ব গাড়িতেও পৌঁছে যেতে পারেন কুম্ভ মেলায়।
জয়পুর থেকে কুম্ভমেলা যাওয়ার রুট
প্রয়াগরাজে আটটি বড় রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে, যেখান থেকে আপনি নেমে মহাকুম্ভ মেলা এলাকায় যেতে পারেন। এর মধ্যে প্রয়াগরাজ জংশন, প্রয়াগরাজ রামবাগ, প্রয়াগ ঘাট, নৈনি জংশন, প্রয়াগরাজ ছিভকি জংশন, দারাগঞ্জ, সুবেদারগঞ্জ, বামরাউলি রেলওয়ে স্টেশনগুলি উল্লেখযোগ্য।
জয়পুর থেকে সরাসরি পৌঁছে যান প্রয়াগরাজ বিমান বন্দরে। এছাড়াও আপনি বারাণসী বিমানবন্দর হয়েও আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ট্রেন বা সড়কপথে মহাকুম্ভ মেলায় পৌঁছাতে হবে।
NH-2 এবং NH-19 হল জাতীয় মহাসড়ক যা সরাসরি প্রয়াগরাজে পৌঁছায়। এই সড়কপথ ধরে আপনি সজজেই পৌঁছাতে পারেন মহাকুম্ভ মেলায়।
আমেদাবাদ থেকে কুম্ভমেলা যাওয়ার রুট
আমদাবাদ থেকে প্রয়াগরাজ জংশন রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাতে পারেন। সেখান থেকে কয়েক ঘন্টার দুরত্বে মহা কুম্ভের সঙ্গমস্থল।
আমদাবাদ থেকে থেকে সরাসরি পৌঁছে যান প্রয়াগরাজ বিমান বন্দরে। তাছাড়া আপনি বারাণসী বিমানবন্দর (লাল বাহাদুর শাস্ত্রী বিমানবন্দর) এবং লখনউ বিমানবন্দর (চৌধুরী চরণ সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) পৌঁছাতে পারেন। সেখান থেকে গাড়ি কিংবা বাস বুকিং করে পৌঁছাতে পারেন মহাকুম্ভে।
আপনি যদি বাসে কিংবা গাড়িতে মহাকুম্ভের মেলায় যেতে চান, NH-2 এবং NH-19 হল জাতীয় মহাসড়ক যা সরাসরি প্রয়াগরাজে পৌঁছায়।
৪) বিশেষ ট্রেন
মহা কুম্ভ মেলা 2025 এর জন্য রেল কতৃপক্ষের তরফ থেকে থাকছে বিশেষ উপহার। সেক্ষেত্রে আপনারা বাড়ি বসে ট্রেন বুকিং করতে পারেন। তারজন্য IRCTC ওয়েবসাইটে যান বা Google Play Store বা Apple App Store থেকে IRCTC Rail Connect অ্যাপটি ডাউনলোড করুন।
ভারতীয় রেলওয়ে বর্তমানে প্রায় ১৩,০০০ টি ট্রেন পরিচালনা করছে, যার মধ্যে ১০,০০০ টি সাধারণ এবং ৩,০০০ টি বিশেষ ট্রেন রয়েছে যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারে। অন্যদিকে কুম্ভমেলা উপলক্ষ্যে পূর্ব রেল চালাবে ৪২ জোড়া বিশেষ ট্রেন। এই ট্রেনগুলি হাওড়া–টুন্ডলা, হাওড়া–ভিন্ড এবং মালদা টাউন–প্রয়াগরাজ রামবাগ রুটে চলবে।
- ০৩৪০৯ মালদা টাউন – প্রয়াগরাজ রামবাগ কুম্ভমেলা স্পেশাল মালদা টাউন থেকে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার এবং শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে পরের দিন বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে প্রয়াগরাজ রামবাগ পৌঁছবে। যা ২ জানুয়ারি তারিখ থেকে ২২ জানুয়ারি তারিখ (১১টি ট্রিপ) পর্যন্ত চলবে।
- ০৩৪১০ প্রয়াগরাজ রামবাগ – মালদা টাউন কুম্ভমেলা স্পেশাল প্রয়াগরাজ রামবাগ থেকে প্রত্যেক শুক্রবার এবং রবিবার রাত ৭টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে পরেরদিন দুপুর ২টো ৩০ মিনিটে মালদা টাউন পৌঁছবে। যা ৩ জানুয়ারি তারিখ থেকে ২৩ জানুয়ারি তারিখ (১১টি ট্রিপ) পর্যন্ত চলবে।
পূর্ব রেলওয়ের যাত্রাপথে উভয় দিকেই নিউ ফারাক্কা, বারহারওয়া, সাহেবগঞ্জ, কাহালগাঁও, ভাগলপুর, সুলতানগঞ্জ, জামালপুর এবং অভয়পুর স্টেশনে থামবে। ট্রেনটিতে জেনারেল সেকেন্ড ক্লাস, স্লিপার ক্লাসের ব্যবস্থাও থাকবে।
- ০৩০২১ হাওড়া – টুন্ডলা কুম্ভমেলা স্পেশাল হাওড়া থেকে রাত ৭টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে পরের দিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে টুন্ডলা পৌঁছবে। যা ১ তারিখ থেকে ৮ তারিখ এবং ১৬, ২০, ২৪ জানুয়ারি চলবে। আর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেও ৭, ১৪, ২১ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ (১৬টি ট্রিপ) পর্যন্ত চলবে।
- ০৩০২২ টুন্ডলা– হাওড়া কুম্ভমেলা স্পেশাল টুন্ডলা থেকে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ছেড়ে পরের দিন বিকেল ৩টে ২০ মিনিটে হাওড়া পৌঁছবে। যা ৩ জানুয়ারি থেকে টানা ১০ জানুয়ারি এবং ১৮, ২২, ২৬ জানুয়ারি চলবে। ০৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯, ১৬, ২৩, ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলবে।
- ০৩০২৩ হাওড়া– টুন্ডলা কুম্ভমেলা স্পেশাল হাওড়া থেকে রাত সাড়ে ১২টায় ছাড়বে এবং পরের দিন রাত ২ টো ৩০ নাগাদ টুন্ডলা পৌঁছবে। যা ২০ জানুয়ারি থেকে ২২, ২৩ তারিখ চলবে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৭, ১৮ এবং ২০ তারিখ (৭টি ট্রিপ) পর্যন্ত চলবে।
- ০৩০২৪ টুন্ডলা– হাওড়া কুম্ভমেলা স্পেশাল টুন্ডলা থেকে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ছাড়বে এবং পরের দিন বিকেল ৩টে ২০ মিনিটে হাওড়া পৌঁছবে। যা ২১ জানুয়ারি এবং ২৩, ২৪ তারিখ চলবে। আর ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৯ এবং ২১ তারিখ পর্যন্ত চলবে।
- ০৩০২৫ হাওড়া–টুন্ডলা কুম্ভমেলা স্পেশাল হাওড়া থেকে সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ছাড়বে ২৮ ফেব্রুয়ারি। আবার টুন্ডলা থেকে হাওড়া কুম্ভমেলা স্পেশাল টুন্ডলা থেকে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ছাড়বে ১ মার্চ।
৫) কুম্ভ মেলায় বিনামূল্যে থাকার জায়গা
দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী মহাকুম্ভে যান। আর মহাকুম্ভে আগত ভক্তদের জন্য বিনামুল্যে থাকার জন্য আবাসনেরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। রাজ্য সরকারের তরফে নেওয়া এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল আর্থিক সমস্যা ছাড়াই যাতে ভক্তরা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ধর্মীয় সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
মেলা প্রাঙ্গণে দেড় লক্ষ তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে পুণ্যার্থীরা বিশ্রাম নিতে পারবেন। পুণ্যার্থীদের শৌচাগারের সমস্যা দূর করতে দেড় লক্ষ অস্থায়ী শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলাদের জন্য আলাদা করে ১৪৪টি চেঞ্জিং রুম তৈরি করা হয়েছে, যাতে তারা নিরাপদভাবে পোশাক পরিবর্তন করতে পারেন।
কুম্ভ মেলায় থাকার জন্য, সরকারের kumbh.gov.in/en/Wheretostaylist ওয়েবসাইটে দেখা যেতে পারে। এই ওয়েবসাইটে শহরের উপলব্ধ আবাসনের তথ্য পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ অমরনাথ মন্দির । তীর্থস্থান । জম্মু-কাশ্মীর
৬) কুম্ভ মেলায় সেরা খাবার
বাঙালি মাত্রই খাদ্যরসিক। তবে মহাকুম্ভে গিয়ে কী খাবেন তা ভেবে হয়রান অনেকেই। তবে কুম্ভ মেলার আবহে যে সব খাবারই নিরামিষ। কারণ উত্তরপ্রদেশ সরকারের নির্দেশে প্রয়াগরাজের মেলা প্রাঙ্গণে আমিষ খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ।
ইলাহাবাদি কচুরি – খাঁটি ঘিয়ে ভাজা। ভিতরে অড়হর ডাল আর পেঁয়াজের পুর। শালপাতার খোপ কাটা থালায় লুচির সাইজ়ের কচুরি ও সাথে মটরের ঘুগনি, আলুর তরকারি বা আলুর দম একবার হলেও চেখে দেখতে হবে। এখানেই শেষ নয়, এর পাশাপাশি থাকে তেঁতুল আর লঙ্কার চাটনি, দই আর বুঁদির রায়তাও। নেতারাম মুলচান্দ অ্যান্ড সনস এবং সুভাষ চাউহারার কচুরির নাম এখানে খুবই জনপ্রিয়।
ছোলে সামোসা – শিঙাড়ার মত হলেও এই খাবারের নাম কিন্তু ছোলে সামোসা। তবে এক্ষেত্রে সামোসা গুলোকে ভেঙে তার উপর ঝালঝাল মশালা ছোলে, দই, তেঁতুলের চাটনি, ধনেপাতা, কুঁচনো পেঁয়াজ আর ঝুড়ি ভাজা ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয়।
লোকনাথ গলির চাট – ভারতের রাস্তার ধারের খাবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল চাট হল এই লোকনাথ গলির চাট। গোলগাপ্পা চাট, দহিপুরী, দহি শোঁঠ কে বাতাসে, ঘিয়ে ভাজা ফুলকির চাট। সুযোগ পেলে চেখে দেখতে ভুলবেন না।
চায়ের সঙ্গে জিলিপি – সকালের নাস্তায় চায়ের সঙ্গে জিলিপি একসঙ্গে হলে মন্দ হয় না। গরম গরম জিলিপি ভাজা সাথে মশলা চা দিয়েই নাকি শুরু হয় এখানকার বাসিন্দাদের প্রাতরাশ।
আরও পড়ুনঃ মহাকালেশ্বর মন্দির । তীর্থস্থান । মধ্যপ্রদেশ
৭) নিরাপত্তা টিপস:
মহাকুম্ভে পুণ্যস্নানে আসা পুণ্যার্থীদের সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে কিছু নিরাপত্তা টিপস অনুসরন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- মহাকুম্ভের মেলায় পুণ্যস্নানে অংশগ্রহনে সবার প্রথমে যে বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার তা হল হোটেল বুকিং কিংবা যারা বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা খুঁজছেন তারা সেই সম্পর্কে আগে থেকে অবগত থাকুন।
- মহাকুম্ভের মেলায় বৃহৎ জনসমাগমের কারণে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ থাকার জন্য, সর্বদা হাইড্রেট থাকুন, বোতলজাত বা ফিল্টার করা জল পান করুন এবং অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য একটি মাস্ক এবং স্যানিটাইজার বহন করুন।
- অপরিচ্ছিন্ন জায়গা থেকে খাবার খাওয়ায় বিরত থাকুন। সঙ্গে শুকনো-প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন।
- গুরুত্বপূর্ণ পথ নির্দেশগুলি মনে রাখুন এবং অনুসরণ করুন। প্রয়োজনে ফোনে ম্যাপ ব্যবহার করুন।
- প্রয়োজনীয় ওষুধ কাছে রাখুন। চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে মেলার নানা প্রান্তরে। জরুরীকালীন স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য এই মেডিকেল ক্যাম্প গুলোতে যোগাযোগ করুন।
- মহাকুম্ভের মেলা যেহেতু শীতকালে হয়, তাই সঙ্গে গরম পোশাক রাখুন।
- শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের একটি বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এই মেলায়। সেক্ষেত্রে জরুরীকালীন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সহায়তা, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস সহ যোগাযোগের নম্বরগুলি আগে থেকে জেনে রাখুন।
- স্থানীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের প্রতি সচেতন থাকুন। নিরাপত্তা কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশ মেনে চলুন এবং অনুষ্ঠানের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে এমন আচরণ এড়িয়ে চলুন।
- অত্যধিক জনাকীর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকুন এবং নিরাপদ স্নানের জন্য অফ-পিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন।
- পকেটমার থেকে সতর্ক থাকুন। আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখুন এবং নগদ ব্যবহার করার চেয়ে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
প্রঃ ২০২৫ সালে কুম্ভমেলা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছে?
উঃ উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে (১৩ জানুয়ারী থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারী,২০২৫)
প্রঃ দেবভূমি ভারতে প্রথম কবে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উঃ প্রথম কুম্ভ ১৯৫৪ সালে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রঃ প্রয়াগরাজেই কেন মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়?
উঃ কারণ প্রয়াগরাজেই রয়েছে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল। আর পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে যে ৪ জায়গায় অমৃতের ফোঁটা পড়েছিল তার মধ্যে প্রয়াগরাজের বিশেষত্ব সবচেয়ে বেশি। এই সঙ্গমস্থলে স্নান করেই পুণ্য অর্জন করেন লাখ লাখ ভক্তরা।
প্রঃ ভারতে কোথায় কোথায় কুম্ভ মেলা হয়?
উঃ মোট চারটি তীর্থস্থানে অনুষ্ঠিত হয় এই ধর্মীয় সমাবেশ। ১. প্রয়াগরাজ (যেখানে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল) ২. হরিদ্বার (গঙ্গা নদী) ৩. নাসিক (গোদাবরী নদী) ৪. উজ্জয়িনী (শিপ্রা নদী)
প্রঃ কুম্ভ মেলার সাথে কোন পৌরাণিক ঘটনা জড়িত?
উঃ সমুদ্র মন্থন
প্রঃ মহাকুম্ভের আনুষ্ঠানিক স্নানকে কী বলা হয়?
উঃ শাহী স্নান।
প্রঃ ত্রিবেণী সঙ্গমের সাথে কোন নদী যুক্ত?
উঃ গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী।
প্রঃ কোন সালে মহাকুম্ভ মেলা UNESCO দ্বারা একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে পালিত হয়?
উঃ ২০১৭ সালে।
প্রঃ ভারতে কত ধরনের কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়?
উঃ মোট তিন ধরনের কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়: অর্ধ কুম্ভ মেলা, পূর্ণ কুম্ভ মেলা এবং মহা কুম্ভ মেলা। অর্ধ কুম্ভ মেলা প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদ) এবং হরিদ্বারে প্রতি ৬ বছরে পালিত হয়। প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদ), হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিক এই চারটি স্থানে প্রতি ১২ বছরে পূর্ণ কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। মহা কুম্ভ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর একবার হয়। শুধুমাত্র প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদে) আয়োজন করা হয় এই মেলার।