‘একটা সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকতাম, ভেতরে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হত না…ফিরিয়ে দিতেন বড় পরিচালকরা’, কঠোর পরিশ্রম করেই আজ বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা জিতু কমল

জিতু কম

বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কিছু প্রতিভাবান শিল্পী রয়েছেন যাদের ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন না এই ইন্ডাস্ট্রি। কথায় আছে, আসল হিরো চিনতে অনেকটাই যে দেরি হয়ে যায়। এমনি একজন অভিনেতা হলেন জিতু কমল। আজ তার ৩৬ তম জন্মদিন। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে একাধিক বিগ বাজেটের প্রোজেক্টে সুযোগ আসছে তার কাছে। তবে একটা সময় ছিল জিতু এই ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন কদর পায়নি।

আজকের জিতুর যে সাফল্য তার পিছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। যাত্রা পথটা ততটাও মসৃণ ছিল না। প্রচুর ঝড়ঝাপ্টাও এসেছে। কিন্তু হাল ছাড়েনননি। লড়ে গিয়েছেন কারণ তার যে নিজের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল।

ক্যারিয়ারের শুরুতে বিভিন্ন নাটকের দলের হয়ে থিয়েটারে আলো প্রক্ষেপণ এবং আবহ সঙ্গীতের দায়িত্ব সামলাতেন। পাশাপাশি টুকটাক অভিনয়। তবে স্বপ্ন একদিন বড় মাপের পরিচালক হওয়ার। আজও দেখেন।  বড় চরিত্র হিসাবে প্রথম সুযোগ পান ‘সাঁজবেলা’ সিরিয়ালে। এরপর একের পর এক  ‘ভোলা মহেশ্বর’, ‘রাগে অনুরাগে’, ‘মিলন তিথি’—প্রধান মুখ। বাংলা টেলিভিশনের হাত ধরেই তাকে চিনেছেন দর্শক। বহু বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা সত্ত্বেও মিলত হাতে গোনা কাজ। তবে বাংলা টেলিভিশনে তার অভিনয় বরাবরই ছোটপর্দার দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

জিতু কম

শুধু এই ইন্ডাস্ট্রিতে নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে ট্রোলড করা হত বিভিন্ন সময়। তবে সেই সব কখনোই তিনি পাত্তা দেননি। ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল ‘অপরাজিত’র হাত ধরে। অনীক দত্তের পরিচালিত ছবি ‘অপরাজিত’-এ জিতু যেন সত্যিই অপরাজিত।

পর্দার সত্যজিৎ রায় হয়ে ওঠার জার্নিটাও মসৃণ ছিল না। এর জন্য জিতুকে করতে হয়েছে প্রচুর অধ্যবসায়। পর্দায় এই আইকনিক চরিত্রেকে ফুটিয়ে তোলার জন্য জিতুর অনেক রাতই কেটেছে নিদ্রাহীন। প্রথমে সত্যজিৎ রায়ের তরুণ বয়সের জন্য তাঁকে ভাবা হয়েছিল। তারপর সবটা যেন বদলে গেল জিতু হয়ে উঠলেন বড়বেলার ‘মানিক বাবু’।

সত্যজিৎ রায়ের মতো হাঁটা চলা, কথা বলা, বসার ভঙ্গি রপ্ত করার কঠোর অনুশীলনে নিজেকে বেঁধেছিলেন জিতু। সত্যজিৎ রায়ের দাঁতের পাটি নিয়েও জিতুকে কটাক্ষ করছে ছাড়েননি নিন্দুকেরা। তবে ওই যে জিতু যে শিল্পী হিসাবে কোনও খামতি রাখতে চাননি। অভিনেতা সটান দাঁতের চিকিৎসকের কাছে চলে যান যাতে পর্দায় তার কোনও খুঁত না থেকে যায়। এমনকি সেই সময় শোনা যায়, জিতু নিজেকে পুরোপুরি সত্যজিৎ রায় করে তুলতে কয়েক মাস নিজেকে ঘর বন্দীও করে ফেলেছিলেন। নিজেকে এক ঘরে করে শুধুই অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছিলেন।

যেদিন ‘অপরাজিত’ ছবির প্রথম পোস্টার সামনে আসে সেদিন মুখ বন্ধ হয়ে যায় সমালোচকদেরও। তারাও বলতে বাধ্য হয়েছেন ‘এ যেন সাক্ষাৎ সত্যজিৎ রায়’। শুধু বাংলা নয়, বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে পরেছিল তার অভিনয়ের মুগ্ধতা।

পেশাদারিত্বের সাথে তিনি কখনোই আপোস করেন না। তাই তো আজ তিনি হয়ে উঠেছেন বড়পর্দার ‘গৃহপ্রবেশ’ এর ‘মেঘদূত’ তো আবার কখনো বাংলা টেলিভিশনের ‘আর্য সিংহ রায়’। এক কথায় এই মুহূর্তে ‘টক অব দ্য টাউন।’

জিতু কমল

আজ ইন্ডাস্ট্রিতে এত সাফল্য পেলেও একসময় জুটেছিল চরম অপমান। এক সাক্ষাৎকারে একবার তিনি জানিয়েছেন, একটা সময় ছিল যখন একটা কাজের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকত হত বাইরের গেটে। ভেতরে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হত না। এমনকি অধিকাংশ সময় ফিরিয়ে দিতেন বড় পরিচালক এবং প্রযোজকরা।

এক পরিচালকের কাছে ছবি নিয়ে গেলে তিনি জানান ‘তুমি নতুন, তোমার কোনও অভিজ্ঞতা নেই, তাই অপেক্ষা করতে হবে”। থেমে যাননি জিতু। দিনের পর দিন এভাবেই কঠোর লড়াই করেছেন, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আর সেই পরিশ্রমেই আজ গোটা বাংলা পেরিয়ে বিশ্বের মানুষ তার অভিনয় দেখেছেন, প্রশংসা জানাচ্ছেন। কিন্তু অভিনেতা ক্ষোভ একটাই, “নতুনদের সুযোগ না দেওয়া হলে তাঁরা অভিজ্ঞতা পাবে কী করে?

এক সাক্ষাৎকারে একবার তিনি জানিয়েছেন, একটা সময় ছিল যখন একটা কাজের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকত হত বাইরের গেটে। ভেতরে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হত না। এমনকি অধিকাংশ সময় ফিরিয়ে দিতেন বড় পরিচালক এবং প্রযোজকরা।

এক পরিচালকের কাছে ছবি নিয়ে গেলে তিনি জানান ‘তুমি নতুন, তোমার কোনও অভিজ্ঞতা নেই, তাই অপেক্ষা করতে হবে”। থেমে যাননি জিতু। দিনের পর দিন এভাবেই কঠোর লড়াই করেছেন, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আর সেই পরিশ্রমেই আজ গোটা বাংলা পেরিয়ে বিশ্বের মানুষ তার অভিনয় দেখেছেন, প্রশংসা জানাচ্ছেন। কিন্তু অভিনেতা ক্ষোভ একটাই, “নতুনদের সুযোগ না দেওয়া হলে তাঁরা অভিজ্ঞতা পাবে কী করে?