পুরীর জগন্নাথ মন্দির । তীর্থস্থান । ওড়িশা

পুরীর জগন্নাথ মন্দির

ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের ঘুরতে যাওয়া মানেই দিঘা, পুরী, দার্জিলিং। কাজেই পুরীকে বাঙালিদের সেকেন্ড হোম বলা হয়ে থাকে। আর পুরী ভ্রমণের কথা বলতে প্রথমে দুটি ছবি ভেসে ওঠে নীল সমুদ্র সৈকত আর পুরীর জগন্নাথের মন্দির। পুরীতে দেখার জায়গা আরও অনেক রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ জগন্নাথের দেবের দর্শনেই এখানে ছুটে আসেন।

আপনিও কি পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? কিন্তু পুরীতে গিয়ে কোথায় থাকবেন, হোটেল ভাড়া – এই সব নিয়ে চিন্তিত? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলে আপনার জন্য রইল পুরী ভ্রমণের সম্পূর্ণ ট্র্যাভেল গাইড।

পুরী জগন্নাথ মন্দিরে কিভাবে যাবেন?

পুরীর জগন্নাথ মন্দির ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় পরিবহন বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই অবগত থাকতে হবে। পুরীতে পৌঁছানোর জন্য, বিমান ভ্রমণ, ট্রেন বা রোড ট্রিপ যেকোনটাই বেছে নেওয়া যেতে পারে। কলকাতা ছাড়াও বাকি রাজ্য থেকে পুরীর জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে পারেন। আপনি যদি কলকাতাবাসী হয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে যাবেন-

বিমান পথে- পুরীর নিকটতম বিমানবন্দর হল রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা প্রায় 60 কিলোমিটার (37 মাইল) দূরে। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরে, আপনার কাছে পুরী পৌঁছানোর বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে।

ট্রেন পথে- পুরী রেলওয়ে স্টেশন ওডিশার অন্যতম প্রধান রেলওয়ে হাব। কলকাতার হাওড়া জংশন থেকে ট্রেনে যেতে পারেন পুরী। সুপারফাস্ট এবং এক্সপ্রেস ট্রেন সহ বেশ কয়েকটি ট্রেন এই রুটে পরিষেবা দেয়।

সড়ক পথে- নিজস্ব গাড়িতে কিংবা বেশ কয়েকটি সরকারী এবং বেসরকারী বাস পরিষেবাগুলি কলকাতা শহর থেকে পুরী যাওয়ার রুটগুলি পরিচালনা করে।

পুরীতে থাকার সেরা জায়গা । পুরীর হোটেল

নিত্য হাপিয়ে ওঠা জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে অনেক পর্যটকরাই ঘুরতে আসেন পুরীর সমুদ্র সৈকতে। তাই ঘুরতে এসে কোথায় থাকা যায় সেটাও আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হয় আমাদের। তাই আপনি যদি পুরীতে আপনার পরবর্তী ছুটির পরিকল্পনা করে থাকেন, পাশাপাশি পুরী বিচের কাছাকাছি হোটেলে থেকে সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে সবচেয়ে সাশ্রয়ে পুরীর সেরা হোটেল বুক করতে ও হোটেল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পেতে পারেন।

পুরী যাওয়ার সেরা সময়

পুরী সাধারণত সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর হওয়ায়, গ্রীষ্মকালে পুরীর আবহাওয়া থাকে চরম পর্যায়ে, অর্থাৎ অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পুরী ভ্রমণের জন্য গ্রীষ্মকাল একেবারেই উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে বর্ষাকালে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করাও সম্ভব নয়। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত, এই শীতকালীন আবহাওয়াতেই মন্দির এবং পুরীর সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখার সেরা সময়। তাই যারা পুরী ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন তারা আগে থেকেই জেনে নিন পুরীতে থাকার সেরা সময় কখন হতে পারে

পুরী জগন্নাথ মন্দিরে পূজার সময়

চার ধামের এক ধাম হল পুরীর জগন্নাথ মন্দির, যেখানে রোজ হাজার হাজার পুণ্যার্থী আসে জগন্নাথ দেবের কাছে তাদের মনস্কামনা জানাতে। কিন্তু পরবর্তীতে যে সমস্ত দর্শনার্থীরা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের দর্শন পেতে,  জগন্নাথ দেবের কাছে পূজা দিতে চাইছেন তারা জগন্নাথ দেবের মন্দিরে কোন সময়ে পূজা হয় জেনে নিতে পারেন। আর সেই সময় অনুযায়ী ঈশ্বরের কাছে নিজের পূজা অর্পণ করবেন।

পুরী জগন্নাথ মন্দিরে সম্পাদিত আচার-অনুষ্ঠানগুলি নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং এর গভীর আধ্যাত্মিক এবং প্রতীকী অর্থ রয়েছে। আর মন্দিরে আচার নিয়ম মেনে পূজা সম্পাদনার জন্য বেশ কয়েকজন পুরোহিতরাও থাকেন। মন্দিরে দিনটি শুরু হয় দ্বারপীঠ ও মঙ্গল আরতির মাধ্যমে। যা শুরু হয় ভোর ৫টায়। এরপর একে একে সময় অনুযায়ী সম্পন্ন হয় জগন্নাথ দেবের বাকি পূজার নিয়মবিধি।

পুরীর আশেপাশে ঘোরার জায়গা

শুধু পুরী জগন্নাথ মন্দির নয়, পুরী শহরে ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে আরও বিশেষ কিছু স্থান।  উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর হলেও অধিকাংশ পর্যটক ভ্রমণ শুরু করে পুরী দিয়ে, সাধারন পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমী এবং পুর্নাথীদের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র হল পুরী শহরটি। নন্দন কানন, চিলকা, কোনারক বা জগন্নাথের মাসি ও পিসির বাড়ি ছাড়াও এই শহরে এমন কিছু জায়াগা আছে যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা শিল্পের টানে পর্যটকরা বারে বারে আসতে চায়। রয়েছে গোল্ডেন বিচ,ললিতগিরি, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, মোহনা আরও কত কি।

পুরীর সেরা খাবার

পুরীর সমুদ্র সৈকত ঘিরে রয়েছে অসংখ্য সুস্বাদু খাবারের দোকান। যেখানে প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। পুরীর সি-বিচের ধারে মানুষের আকর্ষণ কেড়েছে মাছ ভাজার দোকানগুলি। সামুদ্রিক টাটকা মাছগুলি সারি দিয়ে দোকানে সাজানো থাকে। পর্যটকদের পছন্দমতো সেইগুলি ভেজে পরিবেশন করা হয়। পাশাপাশি পুরীর অন্যতম আকর্ষণ হল খাজা। এছাড়াও পুরীর কোন হোটেলে কোন খাবার সেরা তার সন্ধান পেতে বিস্তারিত জানুন

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তরঃ

প্রঃ-পুরীর জগন্নাথ মন্দির কে নির্মাণ করেন?

উঃ-  পুরীর জগন্নাথ মন্দির টি ১২ শতকে গঙ্গা রাজবংশের রাজা অনন্তবর্মণ চোদাগঙ্গার নির্দেশে নির্মিত হয়েছিল। 

প্রঃ- পুরীর রথযাত্রা উৎসবের তাৎপর্য কি?

উঃ-  পুরী শহরে উদযাপিত অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে রথযাত্রা উৎসব অন্যতম একটি। রথযাত্রা উৎসবের পূর্ণলগ্নে পুরীর রাস্তায় কাঠের তৈরি রথে জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রার শোভাযাত্রা দেখা যায়। আর তাতে লক্ষ লক্ষ ভক্তরা অংশ নেয়।

প্রঃ- পুরীর জগন্নাথ মন্দির ছাড়া অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কি কি?

উঃ- পুরীর জগন্নাথ মন্দির ছাড়া শহরটি তার গোল্ডেন বিচ, কাছাকাছি কোনারক সূর্য মন্দির, চিলিকা অর্থাৎ চিল্কা লেকের জন্য বেশ পরিচিত। এছাড়াও আসেপাশে থাকা আরও অন্যান্য মন্দিরগুলিও বেশ জনপ্রিয়।

প্রঃ- পুরী কিসের জন্য বিখ্যাত?

উঃ- পুরী মূলত জনপ্রিয় তীর্থস্থান জগন্নাথ মন্দিরের জন্য বিখ্যাত, যা হিন্দুদের চারধামের মধ্যে একটি। এছাড়াও পুরী শহরটি তার সুন্দর সমুদ্র সৈকত, বার্ষিক রথযাত্রা উৎসব এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্যও পরিচিত।

প্রঃ- পুরী জগন্নাথ মন্দির এর সাথে কি কোন বিশেষ আচার বা রীতির নিয়ম আছে?

উঃ- পুরী জগন্নাথ মন্দির এ বেশ কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি হল মন্দিরের গম্বুজের উপরের চূড়ায় প্রতিদিনের পতাকা পরিবর্তন ও উত্তোলনের নিয়ম। কোন নিরাপত্তা ছাড়াই পুরোহিত মন্দিরে আহরণ করেন।

প্রঃ- পুরী কোন রাজ্যে অবস্থিত?

উঃ-  পুরী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা রাজ্যে অবস্থিত একটি উপকূলীয় শহর।

প্রঃ- কলকাতা থেকে পুরী শহরের দূরত্ব কত?

উঃ- কলকাতা থেকে পুরী শহরের দূরত্ব প্রায় 500 কিলোমিটার।

প্রঃ- কোন সময়ে পুরী শহরটি ঘুরে দেখার সেরা সময়?

উঃ- মূলত শীতকালীন আবহাওয়ায় পুরী শহরটি ঘুরে দেখার সেরা সময়। এছাড়াও রথযাত্রা উৎসবের সময়ও পুরী রী জগন্নাথ মন্দির দর্শনের সেরা সময়।