তুষার আচ্ছাদিত পাহাড়ের চূড়া, পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মন্দাকিনী নদী আর তারই মাঝে অবস্থিত চারধামের একধাম ও পঞ্চ কেদারের একটি অংশ কেদারনাথ মন্দির। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হত এই মন্দিরে। যেহেতু শীতকালে প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে মন্দিরের রাস্তা বন্ধ থাকে তাই মন্দির ছয় মাস বন্ধ থাকে আর বাকি ছয়মাস খোলা থাকে।
অনেকেই আছেন যারা কেদারনাথ যাত্রার পরিকল্পনা তো করেন কিন্তু কিভাবে যাবেন? কিসে যাবেন? কোন রুটটি ভালো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই যারা দূর দুরান্ত থেকে কেদার বাবার দর্শন করতে চান তাদের সুবিদার্থে আজকের আর্টিকেলে রইল কেদারনাথ মন্দিরে কিভাবে যাবেন? তার বিস্তারিত আলোচনা।
গাড়োয়াল হিমালয়ের মত মোহনীয় স্বর্গরাজ্যের দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড রাজ্যে সহ কেদারনাথ ধামের উদ্দেশ্যে যাত্রার রুটম্যাপ মূলত শুরু হয় দিল্লি থেকে, এছারাও হরিদ্বার, ঋষিকেশ, দেবপ্রয়াগ, শ্রীনগর, রুদ্রপ্রয়াগ এবং অবশেষে গৌরীকুন্ডের মতো শহরগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়া যায় যা কেদারনাথ যাত্রার সূচনা পয়েন্ট।
এক্ষেত্রে বিমানে, ট্রেনপথে, কিংবা সড়কপথও আপনি বেছে নিতে পারেন। বিস্তারিত তথ্য রইল-
বিমানে – কলকাতা থেকে বিমানে প্রথমে পৌঁছে যান দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর। সেখান থেকে ৫ ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান গৌরীকুণ্ড। গৌরীকুণ্ড থেকে পৌঁছে যান কেদারনাথের উদ্দেশ্যে।
এছাড়াও আপনি ফ্লাইটে দিল্লি পৌঁছাতে পারেন সেখান থেকে গাড়িতে কিংবা ট্রেনে হরিদ্বার, সেখান থেকে গুপ্তকাশি (২০৮ কিমি)। গুপ্তকাশি থেকে শোনপ্রয়াগ (৩০ কিমি), সেখান থেকে যেকোন গাড়িতে গৌরিকুন্ড। আর গৌরিকুন্ড থেকেই কেদারনাথ ট্রেক শুরু হয়। গৌরিকুন্ড থেকে কেদারনাথ মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিমি। গৌরীকুন্ড থেকে হাঁটা পথ বা ট্রেক করে ১৬ কিমি পথ অতিক্রম করে পৌঁছতে হবে কেদারনাথ মন্দির। গৌরীকুণ্ড থেকে ভীমবলি,সেখান থেকে লিঞ্চোলি হয়ে কেদারনাথ।
ট্রেনে – হাওড়া থেকে ট্রেনে ধরে পৌঁছে যান হরিদ্বার। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান গুপ্তকাশী। এরপর গুপ্তকাশী থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান শোনপ্রয়াগ অথবা গৌরীকুণ্ড। এছাড়াও ট্রেনে ঋশিকেশ পৌঁছাতে পারেন, সেখান থেকে বাস কিংবা যেকোন গাড়ি করে শোনপ্রয়াগ। সেখান থেকে গৌরীকুণ্ড হয়ে কেদারনাথের উদ্দেশ্যে।
সড়কপথে- কলকাতা থেকে নিজস্ব গাড়িতে কিংবা বাসে দিল্লি। দিল্লি থেকে দেরাদুন হয়ে হরিদ্বার। সেখান থেকে কেদারনাথ ট্রেক করতে পারেন।
হেলিকপ্টারে- অনেকেই যারা হেলিকপ্টারে যেতে চান তারা শোনপ্রয়াগ না গিয়ে ফাটা কিংবা গুপ্তকাশির আসে পাশে নেমে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে কেদারনাথ পৌঁছাতে পারেন।
ট্রেকিং- বেশিরভাগ তীর্থযাত্রী গৌরীকুন্ড থেকে ট্রেক করে কেদারনাথে পৌঁছান। গৌরীকুন্ড থেকে কেদারনাথের ট্র্যাকটি প্রায় ১৬ কিলোমিটার এবং কেদারনাথ মন্দিরে পৌঁছাতে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। ট্রেক চলাকালীন পথে প্রচুর বিশ্রামের জায়গা এবং খাবারের জায়গাও আছে।
আকাশপথে কেদারনাথ মন্দির যাত্রাঃ
রুটের নাম
দূরত্ব
সময়
আরো তথ্য
দিল্লি থেকে কেদারনাথ মন্দির
452 কিমি
1 ঘন্টা 30 মিনিট
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সবার প্রথমে দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর এর জন্য একটি ফ্লাইট বুক করুন। দেরাদুন থেকে সোনপ্রয়াগ পৌঁছাতে যেকোন গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। এরপর সোনপ্রয়াগ থেকে গৌরীকুন্ড হয়ে কেদারনাথের উদ্দেশ্যে রওনা দিন।
কলকাতা থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,293 কিমি
11 ঘন্টা 35 মিনিট
কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর। সেখান থেকে সোনপ্রয়াগ হয়ে গৌরীকুন্ড পৌঁছানোর জন্য যেকোন গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। গৌরীকুন্ড থেকেই কেদারনাথ দর্শনের পথ শুরু হয়।
মুম্বাই থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,462 কিমি
5 ঘন্টা 44 মিনিট
মুম্বাই থেকে কেদারনাথ মন্দিরে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায়আপনি মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট নিতে পারেন। যা দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় নেয়। এছারা দিল্লি এয়ারপোর্ট হয়ে পৌঁছে যান দেরাদুনে জলিগ্রান্ট বিমানবন্দর। এরপর দেরাদুন থেকে গৌরীকুন্ড (২৫০ কিলোমিটার) পৌঁছে যান। এছাড়াও দেরাদুনের সহস্ত্রধারা হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা পাওয়া যায়।
ব্যাঙ্গালোর থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,994 কিমি
4 ঘন্টা 58 মিনিট
ব্যাঙ্গালোর থেকে কেদারনাথের নিকটতম বিমানবন্দর হল দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। যা কেদারনাথ ধাম থেকে প্রায় ২৫০ কিমি দূরে অবস্থিত। এখান থেকে গৌরীকুন্ডে পৌঁছানোর জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। সময় লাগতে পারে ৭ ঘন্টা মত। সেখান থেকেই কেদারনাথ যাত্রার ট্রেক।
চেন্নাই থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,967 কিমি
8 ঘন্টা 10 মিনিট
চেন্নাই থেকে কেদারনাথ ভ্রমণ করতে, সবার প্রথমে দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর এর জন্য একটি ফ্লাইট বুক করুন। ঋষিকেশ থেকে, সোনপ্রয়াগ যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। অবশেষে গৌরীকুন্ডের রাস্তা ধরে ১৬ কিমি ট্রেক করে পৌঁছে যান কেদার বাবার দর্শন করতে।
ট্রেনে কেদারনাথ মন্দির যাত্রাঃ
রুটের নাম
দূরত্ব
সময়
আরো তথ্য
দিল্লি থেকে কেদারনাথ মন্দির
643 কিমি
1 ঘন্টা 30 মিনিট
ট্রেনে দিল্লি থেকে কেদারনাথ যাওয়া যেমন সুবিধাজনক তেমন সময় সাপেক্ষ। কেদারনাথের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল ঋষিকেশ রেলওয়ে স্টেশন যা দিল্লির সাথে সু-সংযুক্ত। নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন হযরত নিজামুদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঋষিকেশ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে পৌঁছান। ঋষিকেশ থেকে সোনপ্রয়াগ পৌঁছাতে যেকোন গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। সোনপ্রয়াগ থেকে গৌরীকুন্ড হয়ে অবশেষে কেদারনাথ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে পারেন।
কলকাতা থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,923 কিমি
11 ঘন্টা 35 মিনিট
কলকাতা থেকে কেদারনাথের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হরিদ্বার কিংবা ঋষিকেশ। হরিদ্বার বা ঋষিকেশ থেকে যেকোন গাড়ি ভাড়া নিয়ে সোনপ্রয়াগ হয়ে গৌরীকুন্ড পৌঁছে যান। মূলত এখান থেকেই শুরু হয় কেদারনাথ যাত্রা।
মুম্বাই থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,713 কিমি
2 ঘন্টা 25 মিনিট
মুম্বাই থেকে সবার প্রথমে কেদারনাথ মন্দিরের নিকটতম রেলস্টেশন ঋষিকেশে পৌঁছাতে হবে। ঋষিকেশ থেকে গাড়িতে সোনপ্রয়াগ হয়ে গৌরীকুন্ড পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে ট্রেক করে কিংবা হেলিকপ্টারে করে পৌঁছাতে পারেন কেদারনাথ।
ব্যাঙ্গালোর থেকে কেদারনাথ মন্দির
2,442 কিমি
7 ঘন্টা 50 মিনিট
কেদারনাথের নিকটতম দুটি রেল স্টেশন হল ঋষিকেশ এবং হরিদ্বার। তাই যেসমস্ত দর্শনার্থী ব্যাঙ্গালোর থেকে আসতে চাইছেন তারা সবার প্রথমে দিল্লি যাওয়ার ট্রেন বুক করে নিন। দিল্লি পৌঁছানোর পর সেখান থেকে ঋষিকেশ বা হরিদ্বার যাওয়ার ট্রেনে উঠে পড়ুন। এরপর গাড়িতে পৌঁছে যাবেন গৌরীকুন্ড।
চেন্নাই থেকে কেদারনাথ মন্দির
2,609 কিমি
8 ঘন্টা 10 মিনিট
চেন্নাই থেকে কেদারনাথ পর্যন্ত কোন সরাসরি ট্রেন নেই তবে আপনি চেন্নাই থেকে নতুন দিল্লি যাওয়ার ট্রেনটি নিতে পারেন। দিল্লি থেকে ঋষিকেশ ট্রেনে যেতে পারেন এবং তারপরে গৌরীকুন্ডে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন। গৌরীকুন্ড থেকে কেদারনাথ ধাম পৌঁছানোর জন্য ১৬ কিমি পথ ট্রেক করে যেতে হবে।
সড়কপথে কেদারনাথ মন্দির যাত্রাঃ
রুটের নাম
দূরত্ব
সময়
আরো তথ্য
দিল্লি থেকে কেদারনাথ মন্দির
452 কিমি
12 ঘন্টা
দিল্লি থেকে কেদারনাথ যাত্রার এই পথটি প্রায় ২২০-২৩০ কিমি। দিল্লি থেকে হরিদ্বার কিংবা ঋষিকেশ পৌঁছে সেখান থেকে ১৪০ কিমি পেরিয়ে রুদ্রপ্রয়াগ। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে গুপ্তকাশীর দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিমি এবং দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। এরপর ৩০ কিমি দুরত্ব পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে সোনপ্রয়াগ। সোনপ্রয়াগ থেকে গৌরীকুন্ডের পথটি মাত্র ৫ কিলোমিটার। সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। গৌরীকুন্ড থেকে ১৬ কিমি ট্রেক করে কেদারনাথের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।
কলকাতা থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,897 কিমি
29 ঘন্টা
কলকাতা থেকে NH19 রুট ধরে বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল এবং ধানবাদ হয়ে এলাহাবাদের দিকে যেতে থাকুন। এরপর এলাহাবাদ থেকে হরিদ্বারের দিকে NH34 রুট ধরে পৌঁছে যান ঋষিকেশ। এরপর NH7 হয়ে ঋষিকেশ থেকে, রুদ্রপ্রয়াগের দিকে এগোতে থাকুন। তারপরে সোনপ্রয়াগ বা গৌরীকুন্ডের রাস্তা অনুসরণ করুন। গৌরীকুন্ড থেকেই শুরু হয় কেদারনাথ যাত্রা।
মুম্বাই থেকে কেদারনাথ মন্দির
1,800 কিমি
30 ঘন্টা
মুম্বাই থেকে নিজস্ব গাড়িতে কিংবা গাড়ি ভাড়া করে দিল্লি পৌঁছাতে পারেন। যার মাঝে দুরত্ব প্রায় ১৪০০ কিমি। সময় লাগে ২৪ থেকে ২৮ ঘন্টা। এরপর দিল্লি থেকে, হরিদ্বার বা ঋষিকেশে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বা বাসে করে গৌরীকুন্ড যেতে পারেন।
ব্যাঙ্গালোর থেকে কেদারনাথ মন্দির
2,580 কিমি
50 ঘন্টা
ব্যাঙ্গালোর থেকে বাসে বা গাড়িতে দিল্লি যেতে হবে। দিল্লি থেকে হরিদ্বার পৌঁছানোর পর সেখান থেকে সোনপ্রয়াগ যাওয়ার জন্য যেকোন গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন কিংবা সেখান থেকে বাস পরিষেবাও পাওয়া যায়। এরপর গৌরীকুন্ড হয়ে কেদারনাথের উদ্দেশ্যে রওনা দিন।
চেন্নাই থেকে কেদারনাথ মন্দির
2,610 কিমি
50 ঘন্টা
সড়কপথে চেন্নাই থেকে সরাসরি কেদারনাথে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। তাই সেক্ষেত্রে ফ্লাইটে দেরাদুন বিমান বন্দরে কিংবা দিল্লি পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেনে হরিদ্বার স্টেশনে পৌঁছাতে পারেন। সেখান থেকে সোনপ্রয়াগ বা গৌরীকুন্ড পৌঁছানোর জন্য যেকোন গাড়ি ভাড়া পেয়ে যাবেন। কেদারনাথ যাত্রার বেসক্যাম্প এখান থেকেই শুরু হয়।