এল ক্লাসিকো: ফুটবলের শ্রেষ্ঠতম দ্বৈরথ

এল ক্লাসিকো, বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ এর ম্যাচ – যার জন্য আমার, আপনার মত বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই ক্লাব মুখোমুখি হলেই দুই দলের খেলোয়াড়, স্টাফ থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকার বা দর্শক, সবার গায়েই এর উত্তাপ এসে লাগে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে সাবেক ইংলিশ ফুটবলার রে হাডসন বলেছেন, “আসলে দুই দলের দ্রুত গতির এবং খুবই উঁচুমানের খেলার কারণেই এই হাইপটা তৈরি হয়। এল ক্লাসিকোর মত এরকম শৈল্পিক ফুটবল আসলে পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না”। 

 ফুটবলের শ্রেষ্ঠতম দ্বৈরথ

এল ক্লাসিকোর ইতিহাস

বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ এর মধ্যকার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ও রাইভালরির ইতিহাস ১০০ বছরের কাছাকাছি। স্পেনের একটি প্রদেশ কাতালানিয়া সবসময়ই নিজেদের স্বাধীনতা ও স্প্যানিশ সাম্রাজ্য থেকে আলাদা হতে চেয়ে আন্দোলন করে আসছিল। ১৯৩০ সালের দিকে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব স্পেনের কাতালান মানুষদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে, ১৯৩৬ সালে স্পেনের শাসনভার নিজের হাতে নেন ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো, যার সময়ে বার্সেলোনার তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, কাতালান সহ অন্যান্য ভাষার ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। 

এই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে থাকে। রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচ মানেই এখানে বড় ব্যবধানে মাদ্রিদ জিতবে, এমনটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। বার্সেলোনার ভঙ্গুর অবস্থার সুযোগ নিয়ে এই সময়ের এক কোপা দেল রে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব ১১-১ গোলে জেতে। রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব গেম এর এই উড়ন্ত অবস্থা, তার সাথে বার্সেলোনার ভঙ্গুর অবস্থা, দুইয়ে মিলে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে রেষারেষি বাড়তেই থাকে। এর ফলে বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচ মানেই উত্তেজনা, লড়াই, এমনকি সংঘর্ষ হওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭৫ এ ফ্রাঙ্কোর মারা যাওয়া ও তার শাসনের সমাপ্তির পর ১৯৮০ থেকে বার্সেলোনা আবারো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মাঠ ও মাঠের বাইরে, দুই জায়গাতেই রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব এর সাথে তাঁদের লড়াই আরো জমজমাট হয়ে ওঠে।

এক নজরে কিছু পরিসংখ্যান

বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের মধ্যে লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা দেল রে, ইত্যাদি নানা প্রতিযোগিতায় অসংখ্যবার মুখোমুখি হয়েছে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হিসাব করলে,

  • দুই দল এখন পর্যন্ত ২৫৮ বার মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে ১০১ বার বার্সেলোনা, ১০৫ বার রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছে এবং ৫২টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
  • এল ক্লাসিকোতে সবচেয়ে বেশি গোল লিওনেল মেসির, ২৬ টি। এরপর ১৮ টি গোল নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় আছেন আলফ্রেডো ডি স্টেফানো এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
  • রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব বনাম ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এর লাইন-আপ এ সবচেয়ে বেশিবার থাকা খেলোয়াড় বার্সেলোনার সার্জিও বুসকেটস। ৪৮টি এল ক্লাসিকোতে থাকা বুসকেটসের পর এই তালিকায় যোথভাবে দ্বিতীয় স্থানে আছেন লিওনেল মেসি ও সার্জিও রামোস, যারা প্রত্যেকে ৪৫টি করে ম্যাচ খেলেছেন। 
  • এল ক্লাসিকোতে সবচেয়ে বেশি এ্যাসিস্টের রেকর্ডটিও লিওনেল মেসির, তিনি ১৪টি এ্যাসিস্ট নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে আছেন। 

শুধু পরিসংখ্যানে কিন্তু এল ক্লাসিকোর মাহাত্ম্য বোঝা যাবেনা। প্রতি ম্যাচের আগে জল্পনা-কল্পনা, খেলোয়াড়-কোচদের কথার লড়াই, ফ্যানদের আগের নানান পরিসংখ্যান নিয়ে মাতামাতি- এসবই এল ক্লাসিকোকে দেয় এক আলাদা মাত্রা।

সময়ের সাথে সাথে এল ক্লাসিকো কেন্দ্রিক উত্তেজনা তো কমেইনি, বরং আরও বেড়েছে। এখনো বিশ্বজোড়া ফ্যানরা নিজের দলকে এগিয়ে রাখতে চান বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের আগে, সাথে দর্শক হিসেবেও থাকে অনেক রকম জয়ের সুযোগ। বিভিন্ন ওয়েবসাইট অনেকরকম বোনাস দেয় এল ক্লাসিকোর আগে, তেমনি একটি সাইটে সাইটে সেরা বোনাস সম্পর্কে সব mightytips.guide পেতে ভিজিট করতে পারেন আপনিও। প্রতিটি ম্যাচের আগে অডগুলো দেখে নিন, জয়-পরাজয় থেকে শুরু করে কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এসব কিছু নিয়েই প্রেডিকশন করার সুযোগ আছে এই ওয়েবসাইটে। 

 ফুটবলের শ্রেষ্ঠতম দ্বৈরথ

এল ক্লাসিকোর যত বিখ্যাত লড়াই

এল ক্লাসিকো কিন্তু শুধু রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব বা বার্সেলোনার দলগত লড়াই এর মধ্যে থেমে থাকেনা, বরং বিভিন্ন একক খেলোয়াড়ের নৈপূণ্য, এবং প্রতিপক্ষের কোন বিশেষ খেলোয়াড়ের সাথে ওই খেলোয়াড়ের দ্বন্দ্ব অনেক সময় এই রাইভালরিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। সদ্যসাবেক মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের কথা আমাদের সবারই জানা।  রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব বনাম ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এর লাইন-আপ এ মেসি-রোনালদো থাকবেন না, এটা একসময় অকল্পনীয় ছিল। এই দুইজন এল ক্লাসিকোকেই নিয়ে গিয়েছেন অন্য এক উচ্চতায়। সাবেক বার্সেলোনা কোচ পেপ গার্দিওলার মতে, “মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথ ছিল গত বিশ বছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গত দুই দশকে তাঁরা যা অর্জন করেছে তা আসলেই অবিশ্বাস্য”। এরকম আরও একটি উল্লেখযোগ্য লড়াই ছিল ২০০৩-০৬ সালের দিকে রোনালদিনহো ও জিনেদিন জিদানের মধ্যে। রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচ মানেই ছিল জিদানের সেরা সব কৌশলের প্রদর্শনী।  বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচে একদিকে জিদান আরেকদিকে রোনালদিনহোর সৃষ্টিশীল ফুটবল মিলিয়ে এক অন্যরকম মোহ সৃষ্টি করত দর্শকদের জন্য। একইসাথে দুইদলের সামগ্রিক পারফর্ম্যান্সও তখন ছিল ইউরোপসেরা, ফলে সারাবিশ্বেই এল ক্লাসিকো নিয়ে তৈরি হতো ব্যাপক উন্মাদনা।

তবে শুধু যে এ্যাটাকিং প্লেয়ারদের মধ্যেই লড়াই ছিল তা কিন্তু নয়, বার্সেলোনার জেরার্ড পিকে এবং রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব এর সার্জিও রামোসের দ্বৈরথের কথা এখনো ফ্যানরা স্মরণ করেন। দুই ডিফেন্ডার দুই দলের দেয়াল হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কর্নারের সময় প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে হেডে গোল করতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। পাশাপাশি তাদের আক্রমণাত্মক খেলার স্টাইল তো আছেই।  রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব গেম যেন সার্জিও রামোসের উপস্থিতি ছাড়া অসম্পূর্ণ, একইভাবে জেরার্ড পিকের অনুপস্থিতিও বার্সেলোনা ফ্যানরা অনুভব করেন আজও প্রবলভাবে। 

এল ক্লাসিকো নিয়ে উন্মাদনা এখনো আছে আগের মতই। আজও এল ক্লাসিকো ম্যাচের আগেই দর্শকরা অধীর আগ্রহে বসে থাকেন রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব বনাম ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এর লাইন-আপ জানতে। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম মুখরিত হয় বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ- কে জিতবে আজ, এই তর্কের ঝড়ে। কোন ম্যাচে হয়ত রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব এগিয়ে থাকে, আবার পরের ম্যাচেই বার্সেলোনা তুলে নেয় দাপুটে জয়। একেক ম্যাচে একেক প্লেয়ার নিজেদের নিয়ে যান অন্যরকম উচ্চতায়, আর ফ্যানদের উপহার দেন অবিস্মরণীয় এক একটি ম্যাচের স্মৃতি। শতবর্ষের পুরনো বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ এর দ্বৈরথ, এল ক্লসিকো, এভাবেই বেঁচে থাকে খেলার মাঠে, টিভির পর্দায়, কিংবা সমর্থকের মনে, যুগ যুগ ধরে।