যেকোনো জনপ্রিয় মেগা ধারাবাহিকে নায়ক-নায়িকা’র জুটি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পরেন দর্শক। মাঝপথে আচমকাই নায়ক-নায়িকা পরিবর্তন হলে দর্শকের একটু মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়ে যায়। আর সেটা যদি হয় কোনও ম্যাজিকাল জুটি। এই ধরুন যেমন জি-বাংলার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকের জিতু কমল আর দিতিপ্রিয়া রায়ের জুটি।
টেলিভিশনের দর্শকের কাছে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকের ক্রেজ আশাকরি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এসভিএফ এর বিগ বাজেটের এই মেগার প্রথম শুটিং হয়েছিল কাশ্মীরে। কারণ এই ধারাবাহিক যে পর্দায় আলোড়ন ফেলবে তা আগে থেকে আন্দাজ করেছিলেন প্রযোজনা সংস্থা। তার একমাত্র কারণ নায়ক-নায়িকা। দুই তাবড় নায়ক-নায়িকা বহুবছর পর একসাথে পর্দায় ফিরিয়ে আনা যে বড় চমক সেটা আগেভাগেই বুঝে যান সংস্থা। আর সেটার ব্যতিক্রম একেবারেই হয়নি।
চিরদিনই তুমি যে আমার ধারাবাহিকের প্রথম প্রোমোতেই জিতু আর দিতিপ্রিয়াকে একসঙ্গে দেখে যেমন অবাক হয়েছিলেন দর্শক, তেমন তাদের উত্তেজনা দেখে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আশাবাদী ছিলেন।
মাত্র একমাস, দর্শকের ঘরে ঘরে ছেয়ে গেল এই ম্যাজিকাল জুটি। জিতু-দিতিপ্রিয়া অর্থাৎ আর্য-অপর্ণা রেকর্ড ভেঙে দিল সব জনপ্রিয়তার। এই মেগা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক বড় বড় পরিকল্পনা ছিল নির্মাতাদের। কিন্তু বাধ সারে নায়ক-নায়িকার ব্যক্তিগত ঝামেলা। কে ভেবেছিল এতদুর জলঘোলা হবে?
নায়িকার শর্তেই সম্ভবত গল্পে অনেক পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। কারণ নায়িকা রোম্যান্টিক সিনে রাজী ছিল না আর বাধ্য হয়েই গল্পে আর্য-অপর্ণার কেমেস্ট্রি পরিবর্তন করতে হয়। কারণ নায়ক-নায়িকা কাউকেই হারাতে চাননি কর্তৃপক্ষ। মাঝপথে নায়ক-নায়িকা সরে গেলে এই ধারাবাহিকের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে পারে সেই কারণেই তাদের শর্ত মেনে কাজ চলছিল। যদিও সেই গল্পে একেবারেই নিরাশ ছিলেন দর্শকেরা।
পরবর্তীকালে শেষপর্যন্ত চেষ্টা করেও নায়িকাকে ধরে রাখা যায়নি। নায়িকা সরতেই টেকনিশিয়ান এবং ধারাবাহিকের বাকি সদস্যদের কথা মাথায় রেখেই সংস্থা বড় চ্যালেঞ্জ নেন নায়িকা পরিবর্তনের।
হাতে সময় নিয়ে দিতিপ্রিয়া রায়ের জায়গায় অপর্ণা হিসাবে বেছে নেওয়া হয় নবাগতা অভিনেত্রী শিরিন পালকে। থিয়েটার জগতের মেয়ের প্রথম ধারাবাহিক। স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল গোটা টিম । কারণ দিতিপ্রিয়ার জায়গায় শিরিনকে দর্শক কতটা আপন করে নেবে সেটাই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হয়েছিল।
যেকোনো ধারাবাহিকের অস্তিত্ব নির্ভর করে টিআরপি উপর। নতুন নায়িকা আসায় টিআরপি যদি ডাউন হয়ে যায় তাহলে ধারাবাহিক বন্ধ শেষ সিদ্ধান্ত নিতে হত চ্যানেলকে।
সেই ভয় অনেকটাই কেটেছে নায়িকার এন্ট্রিতে। লুক প্রকাশ থেকে প্রথমদিন অপর্ণা হিসাবে শিরিনের এন্ট্রিতে দর্শকের উন্মাদনা যেন আরও ছাপিয়ে যায়। কেউ ভাবেনি দিতিপ্রিয়ার জায়গায় নতুন নায়িকাকে এইভাবে গ্রহণ করবেন দর্শক। পাশাপাশি তো রয়েছে জিতু কমলের অনবদ্য অভিনয়। দর্শকের দাবি, ‘চিরদিনই যেন প্রাণ ফিরে পেল। সেই পুরনো আর্য-অপর্ণাকে খুঁজে পেয়েছেন তারা।”
দিতিপ্রিয়া সরায় অনেক ভেবেছিল টিআরপি কমবে কিন্তু সেটা একেবারেই হয়নি। বরং দিতিপ্রিয়া থাকাকালীন টিআরপি ছিল ৬.০। আর নতুন নায়িকা আসায় টিআরপি ০.১ বৃদ্ধি পায়। আসলে এই ধারাবাহিকের মূল কেন্দ্রবিন্দু হল আর্য সিংহ রায় চরিত্র, আর্য-অপর্ণা’র রসায়ন আর ধারাবাহিকের থ্রিলার। তাই নায়িকা পরিবর্তন সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
এখন দেখার বিষয় আগামীদিনে জিতু-দিতিপ্রিয়ার ম্যাজিকাল জুটির জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে যেতে পারে কিনা জিতু-শিরিনের জুটি?

