পুরী শহরটি তার সুন্দর নিদর্শন, অপূর্ব স্থাপত্য, তীর্থস্থানের সংস্কৃতিতে সজ্জিত থাকলেও এখানকার সুস্বাদু খাবার গুলি এই শহরকে আরও বিশেষ করে তোলে। সবার প্রথমেই বলি, জগন্নাথ দেবের মন্দিরে মহাপ্রসাদের কথা। যা সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবারের পাশাপাশি ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে রান্না করা হয়।
এছাড়াও পুরী শহরে ওড়িয়া রন্ধনপ্রণালীতে তৈরি খাবার গুলিও বেশ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকরও বটে। ওড়িয়া রন্ধন প্রণালীতে নিরামিষ এবং আমিষ উভয় ধরনের খাবারেরই বিস্তৃতি রয়েছে। পাশাপাশি পুরীর সমুদ্র সৈকত ঘিরে রয়েছে অসংখ্য স্ট্রিট ফুডের দোকান। যেখানে প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। পুরীর সি-বিচের ধারে পর্যটকদের আকর্ষণ কেড়েছে সামুদ্রিক টাটকা মাছ ভাজার দোকানগুলি। মিষ্ঠান্ন জাতীয় খাবারের মধ্যে পুরীর অন্যতম আকর্ষণ খাজা।
তাই আপনার পরবর্তী ডেস্টিনেশন যদি পুরী হয়ে থাকে তাহলে পুরী শহরের এই জনপ্রিয় খাবার গুলি টেস্ট করতে ভুলবেন না। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পুরী শহরের জনপ্রিয় কিছু খাবারের নাম-
১. পুরীর ডালমা (Dalma)
এই খাবারটি মসুর ডাল এবং সবজির মিশ্রণ, যা তেল ছাড়াই প্রস্তুত করা হয়। পুরী শহরের একটি বিশেষ আকর্ষণ এবং রথযাত্রার সময় ভগবান জগন্নাথকেও এই খাবারটি পরিবেশন করা হয়।
পুরী গেলে অবশ্যই ভিআইপি রোডে ফায়ার স্টেশনের কাছে ডালমা রেস্তোরাঁটিতে যেতে পারেন। ডালমা রেস্তোরাঁটি বিশেষ করে ডালমা খাবারের জন্য বিখ্যাত। রেস্তোরাঁ অভ্যন্তরে ঘরোয়া পরিবেশের অনুভুতি পেয়ে যাবেন। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য সেরা জায়গা।
২. পুরীর খেচেড়ি বা খিচুড়ি (Khechadi)
এটি আমাদের বাঙ্গালী রান্ন খিচুড়ির ওড়িয়া সংস্করণ। খাঁটি দেশি ঘিতে মসুর ডাল এবং চাল দিয়ে তৈরি, এই খাবারটি ভগবান জগন্নাথকে নিবেদিত ৫৬ ভোগের একটি অংশ।
৩. পুরীর পাখালা ভাটা (Pakhala Bhaat)
ওড়িয়াবাসীদের রান্নাঘরে এটি একটি জনপ্রিয় দৈনন্দিন খাবার। ভাতের সাথে মেশানো চালের জল, যা পাখালা ভাটা নামে পরিচিত। আর জনপ্রিয় খাবারের স্বাদ পেতে যেতে পারেন পুরী শহরের ওয়াইল্ডগ্রাস রেস্তোরাঁয়, যা ভিআইপি রোডের কাছে হোটেল লি গার্ডেন এর কাছেই রয়েছে।
৪. পুরীর আলু দম (Aloo Dum)
এটি একটি মশলাদার আলুর তরকারি, প্রায়শই পুরি বা রুটির সাথে উপভোগ করা হয়, ওখানকার স্থানীয় মশলার মিশ্রণে এই খাবার বেশ স্বাদযুক্ত। পুরী ভ্রমনে এসে এই ধরনের নানা রকমের স্পাইসি খাবারের অনুসন্ধান পেতে অবশ্যই যেতে পারেন ভিআইপি রোডের কাছে হোটেল লি গার্ডেন এর কাছেই রয়েছে ওয়াইল্ডগ্রাস রেস্তোরাঁ। সুন্দর খাবারের সাথে মনোরম পরিবেশও পাবেন এই রেস্তরাঁয়।
৫.পুরীর ছেনা পোড়া (Chhenapoda)
পনির, চিনি, এলাচ গুঁড়া, চালের আটা, বাদাম এবং ঘি দিয়ে তৈরি জগন্নাথ মন্দিরে নিবেদিত এই মিষ্টি জাতীয় খাবারটি একেবারেই মিস করার মতো নয়। পুরী জগন্নাথ মন্দির রোডেই রয়েছে জয় জগন্নাথ সুইটস, এখানকার অসাধারণ সুস্বাদু ছেনা পোড়া একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন, আশা করি ভালো লাগবে।
৬. পুরীর ছেনা গাজা (Chhena gaja)
ছেনা থেকে তৈরি আরেকটি মিষ্টি উপাদেয়, ভাজা এবং চিনির সিরাপে ভিজিয়ে তৈরি করা হয় ছেনা গাজা। আর এই মিষ্টি জাতীয় খাবারটি উপভোগ করতে অবশ্যই যেতে হবে পুরীর কাকাতুয়া মিষ্ঠান্ন ভান্ডারে।
৭. পুরীর রসবালি (Rasabali)
রসবালি হল একটি ঐতিহ্যবাহী ওড়িয়া মিষ্টি খাবার। এলাচের স্বাদযুক্ত ঘন, মিষ্টি দুধে ভিজিয়ে ভাজা চ্যাপ্টা আকৃতির মিষ্ঠান্নটি রসবালি নামে পরিচিত। পুরীর রসবালি চেখে দেখতে জগন্নাথ মন্দিরের আসেপাশের মিষ্টির দোকান গুলির মধ্যে ওল্ড গাঙ্গুরাম সুইটস বেস্ট হবে।
৮. পুরীর সাঁতুলা (Santula)
এটি একটি নিরামিষ তরকারী, যা মূলত পেঁপে, আলু, বেগুন এবং টমেটো দিয়ে তৈরি করা হয়।
পুরী ভ্রমনে সাঁতুলার স্বাদ পেতে, ভিআইপি রোডে ফায়ার স্টেশনের কাছে ডালমা রেস্তোরাঁটিতে গিয়ে একবার চেখে দেখতে পারেন এই খাবারটি।
৯. পুরীর পোড়া পিঠা (Poda Pitha)
জগন্নাথ দেবের অতি প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হল পোড়া পিঠা। চালের আটা, নারকেল, গুড়,এলাচ এবং শুকনো ফল দিয়ে তইরিএই খাবারটি খুবই সুস্বাদু।
পুরী শহরের এই বিখ্যাত পোড়া পিঠা টেস্ট করতে জগন্নাথ মন্দির রোডে, পদ্মিনী লজ এর ঠিক নিচেই রয়েছে আসল নরসিংহ সুইটস, -এ যেতে পারেন।
১০. পুরীর কণিকা (Kanika)
স্বাদে মিষ্টি, অনেকটা বাঙ্গালী রান্না পোলাও এর মত দেখতে এই খাবারটি। কিংবা সুগন্ধি যুক্ত মিষ্টি ভাতও বলা যেতে পারে এই খাবারটিকে। প্রায়শই জগন্নাথ মন্দিরে পরিবেশিত মহাপ্রসাদের একটি অংশ হল পুরীর জনপ্রিয় কণিকা ভোগ।
১১.পুরীর খাজা (Khaja)
ময়দা, তেল এবং চিনি দিয়ে তৈরি বহু স্তরযুক্ত ভাজা মিষ্ঠান্নটি খাজা নামে পরিচিত যা এই শহরের জনপ্রিয় একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার।
পুরী গেলে পুরীর খাজা খায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই আপনিও যদি পুরী ভ্রমনে যান তাহলে পুরীর কাকাতুয়া মিষ্ঠান্ন ভান্ডারের খাজা টেস্ট করতে ভুলবেন না।
১২. পুরীর মালপুয়া (Malpua)
ময়দা, দুধ, চিনি, মৌরি বীজ এবং এলাচ দিয়ে তৈরি, এই মুখের জলের খাবারটি পুরী মন্দিরে ভগবান জগন্নাথের সকালের খাবার হিসাবে পরিবেশন করা হয়।
জগন্নাথ মন্দির রোডে, পদ্মিনী লজ এর ঠিক নিচেই রয়েছে আসল নরসিংহ সুইটস, যেখানে গেলে আপনি পুরীর বিখ্যাত মালপুয়ার স্বাদ নিতে পারবেন।