ইশপ গ্রিস দেশের মানুষ ছিলেন। যিনি পশুপাখিদের নিয়ে গল্প বানাতেন। জীবজন্তুদের গল্পের চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত করা তার গল্পগুলি আমাদের নীতিশিক্ষা দেয়। ঈশপের গল্প এর মধ্যে দিয়ে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন।
১. ঈশপের গল্প – খরগোশ এবং কচ্ছপ
একসময় একটা খরগোশ ছিল যে সবসময়ই তার দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে নিয়ে বড়াই করত। তার এই অহংকারে ক্লান্ত হয়ে সব প্রাণী একজোট হয় এবং সকলে খরগোশের কাছে গিয়ে বলে, তাকে এমন একটি প্রাণী বেছে নিতে যার সাথে তাকে দৌড় প্রতিযোগিতা করতে হবে। যদি সে জয়ী হয়, তাহলে সে কেবল এই বনের প্রাণীদের কাছেই নয়, বরং আশেপাশের প্রাণীদের কাছেও সেরা হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে হেরে যায়, তাহলে সে আর কখনও তার দৌড়ানো নিয়ে কারো কাছে একটি শব্দও উচ্চারণ করবে না।
খরগোশ এই শর্তে রাজি হল। সে দেখেছিল যে কচ্ছপটি ধীরে হাঁটে। তাই সে কচ্ছপের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিল।
সমস্ত প্রাণী প্রতিযোগিতা দেখার জন্য জড়ো হয়েছিল কারণ তারা ফলাফল জানতে আগ্রহী ছিল। তারা দৌড়ের জন্য বনের মধ্য দিয়ে একটি আঁকাবাঁকা পথ চিহ্নিত করেছিল।
খরগোশ কিছুক্ষণ দৌড়ে গেল, তারপর থেমে পিছনে ফিরে তাকাল। আর দেখল কচ্ছপটি তার অনেক পিছনে রয়েছে।
কচ্ছপের গতি দেখে খরগোশ ভাবল সে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে, ঠিক তখনই কচ্ছপটি এসে পড়ল। সে গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল, আর ‘দেখো! গভীর ঘুমে ডুবে গেল।’ এদিকে, কচ্ছপটি অবিচলভাবে হেঁটে চলল, হেঁটেই চলল। শেষ রেখায় না পৌঁছানো পর্যন্ত সে থামল না।
দৌড় প্রতিযোগিতা দেখছিল এমন প্রাণীরা কচ্ছপের জন্য জোরে চিৎকার করে উঠল। শব্দে খরগোশের ঘুম ভেঙে গেল। সে হাত বাড়িয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কচ্ছপ ইতিমধ্যেই শেষ রেখা অতিক্রম করে ফেলেছে।
নীতি: ধীর এবং অবিচল দৌড় জয় করে।
২. ঈশপের গল্প – পিঁপড়া এবং ঘাসফড়িং
এক গ্রীষ্মের দুপুর, চারপাশে রোদ ঝলমল। সেই সময় একটি ঘাস ফড়িং ঘাসের উপরে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা করছিল। ফড়িংয়ের পাশ থেকে একদল পিঁপড়া একটা বোঝা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল।
ঘাসফড়িং দেখতে পেয়ে পিঁপড়াদের বলল, কি সুন্দর দুপুর, এত ঝলমলে রোদ। এমন দিনে তোমারা কি করছ? চলো, আমরা খেলা করি।
পিঁপড়ে বলল, না, “আমাদের খেলা করার সময় নেই। আমরা শীতের জন্য খাবার সঞ্চয় করছি। তোমাকেও একই কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছি, বন্ধু।”
ফড়িং বলল, “শীতকাল আসতে এখনো অনেক সময় বাকি।” ফড়িংয়ের কথা শুনে পিঁপড়েরা আবার তাদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আর ফড়িং লাফিয়ে লাফিয়ে খেলতে লাগল।
দেখতে দেখতে শীতকাল চলে এলো। চারপাশ কুয়াশায় ভরে উঠল। ফড়িং তখন কোনও খাবার খুঁজে পেল না। কারণ সবকিছুতে তুষারে ঢেকে যায়।
তখন সে পিঁপড়ার বাসায় গিয়ে বলল, “আমাকে একটু সাহায্য করবে। আমি কখনো খাবার খুঁজে পাচ্ছি না, আমাকে একটু খাবার দেবে?”
পিঁপড়া বলল, কেন, তুমি খাবার সঞ্চয় করে রাখোনি ? সারা গ্রীষ্মে তুমি কি করলে?
ফড়িং লজ্জার সাথে বলল, “আমি খেলা করেছি।”
পিঁপড়া বিরক্ত হয়ে বলল, “তুমি সারা গরমে খেলে গেলেন। এখন শীত চলে এসেছে আর আমাদের কাছে শুধুমাত্র আমাদের জন্যই খাবার সঞ্চয় করা রয়েছে”, এই বলে সে দরজা বন্ধ করে দিল।
সারাদিকে তুষারে ভরে গেছে। আর ফড়িং খিদের জ্বালায় চারিদিকে ঘুরে বেরাচ্ছে আর ভাবছে ইস! যদি সে তখন পিঁপড়াদের কথা শুনত।
নীতি: আমাদের ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে নইলে আফসোস করতে হবে
৩. ঈশপের গল্প – কাক এবং শিয়াল
একবার একটি বড়, কালো ক্ষুধার্ত কাক খাবারের খোঁজে এদিক-ওদিক উড়ে যাচ্ছিল। সে মাটিতে পড়ে থাকা একটি বড় রুটির টুকরো দেখতে পেল এবং তার ঠোঁটে তুলে নিল। তারপর সে কাছের একটি গাছের ডালে উড়ে গেল এবং তার ডালে বসল। সে রুটি খাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল।
একটা শেয়াল পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, সে দেখতে পেল কাকটি তার ঠোঁটে রুটি নিয়ে গাছে বসে আছে।
শিয়াল মনে মনে ভাবল, “উমমম। রুটিটা দেখতে খুব সুস্বাদু লাগছে। কাকের কাছ থেকে এটা আনার একটা উপায় আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।”
শিয়াল গাছের কাছে গিয়ে বলল, “ও কাক, আজ তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তোমার পালকগুলো এত চকচকে এবং ঝলমলে। তোমাকে পাখিদের রাজার মতো দেখাচ্ছে। আমি নিশ্চিত তোমার কণ্ঠস্বর আরও সুন্দর।”
কাক তার প্রশংসা শুনে খুশি হল। কিন্তু তার ঠোঁটে রুটি থাকার কারণে সে একটি কথাও বলতে পারল না।
শিয়ালটি বলতে লাগলো, “হে পাখিদের রাজা! তোমার গান শুনতে পেলে আমি হবো সবচেয়ে ধন্য শিয়াল।”
কাকটি, যে কখনও এত প্রশংসা শোনেনি, আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। সে ঘাড় নাড়াল, আকাশের দিকে মাথা তুলল এবং জোরে জোরে ডাকতে শুরু করল।
ব্যাস…
রুটিটা সোজা মাটিতে পড়ল আর শিয়ালটি নিয়ে পালাল।
নীতি: তোষামোদ থেকে সাবধান।
উপরের ঈশপের গল্প থেকে বাচ্চারা জীবনের কিছু নীতি গল্প শিখতে পারবে যা আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।




