ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দার্শনিক তথা শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। তার জন্মবার্ষিকীর এই বিশেষ দিনেই সারা বিশ্ব জুড়ে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। এর কারণ তিনি দেশে শিক্ষার প্রসারে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। আর তাই তার জন্মবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পাশাপাশি সমাজে শিক্ষকদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দিতে পালিত হয় শিক্ষক দিবস। আজকের পোস্টে রইল বিখ্যাত কিছু ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি ও তার অনুপ্রেরণামূলক বাণী সমূহ।
ছোট থেকেই মেধাবী হওয়ার দরুন তিনি দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯১৬ সালে মাদ্রাজ রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও তিনি চাকরি পান। দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করা পর, ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ সালে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
Read more: 80 টি জীবনে সাফল্যের উক্তি । মোটিভেশনাল বার্তা
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি :
এখানে বিখ্যাত কিছু ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি রইল যা সকলকে অনুপ্রেরণা দেবে-
একজন প্রকৃত গুরু হলেন তিনিই যিনি আমাদের নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা করতে সাহায্য করেন।
৫ সেপ্টেম্বর, আমার জন্মদিন হিসাবে উদযাপন না করে, শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হলে আমার গর্বিত।
সহনশীলতা হল সেই শ্রদ্ধাঞ্জলি যা সসীম মন অসীমের অক্ষয়তাকে প্রদান করে।
বাস্তবের সাথে অসন্তুষ্টি, প্রতিটি নৈতিক পরিবর্তন এবং আধ্যাত্মিক পুনর্জন্মের প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ ডিগ্রী এবং ডিপ্লোমা প্রদান নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা এবং অগ্রিম শিক্ষার বিকাশ করা। প্রথমটি কর্পোরেট জীবন ছাড়া অসম্ভব, পরেরটি অনার্স এবং স্নাতকোত্তর ছাড়া অসম্ভব।
নিখুঁত মনের মানুষরাই জীবনে আধ্যাত্মিকতার অর্থ বুঝতে পারে। কারণ মানুষের সত্যতা, আধ্যাত্মিক একনিষ্ঠতাই তার একমাত্র পরিচয়।
Read more: মাইকেল মধুসূদন দত্তের উক্তি । জনপ্রিয় কবিতা
একটু ইতিহাস গড়তে শতবর্ষ লাগে, কিন্তু ঐতিহ্য তৈরি করতে শতবর্ষের ইতিহাস লাগে।
যদি মুক্ত সমাজ গড়তে চাও, তবে সবার আগে শিক্ষার্থীদের মনকে কলুষতা মুক্ত করতে হবে।
বর্তমান সময়কে বোঝার চেষ্টা করতে হবে সেইসাথে অতীতকেও জানতে হবে।
মানুষের সঙ্গে মিশতে বয়স, জাতি, পদমর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এসবের পার্থক্য বিচার করার কোন মূল্যই নেই আমার কাছে।
অর্থ-সম্পদ, কখনও কোন মানুষকে পরিপূর্ণতা দেয় না। আত্মিক উন্নতির মাধ্যমেই মানুষ পরিপূর্ণতা লাভ করে।
এক কথায়, মানুষ হল শরীর, মন এবং আত্মা এই তিন শক্তির সমষ্টি।
পুস্তকই হল সভ্যতার বাহন।
পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় নেশা হল টাকা কামানো।
Read more: পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর বিখ্যাত কিছু উক্তি
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর মহান বাণী:
নীচে থাকা ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি ও মহান বাণী গুলি মানব জীবনে মনুষ্যত্ববোধ জাগিয়ে তুলবে-
জ্ঞান আমাদের শক্তি দেয়, প্রেম আমাদের পূর্ণতা দেয়।
জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই আনন্দ ও সুখে পরিপূর্ণ জীবন সম্ভব।
বই হল সেই মাধ্যম যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারি।
ধর্ম হল আচরণ, নিছক বিশ্বাস নয়।
সংলাপের মাধ্যমই সকল সমস্যা সমাধান এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করার সর্বোত্তম উপায়।
Read more: 50 টি সেরা উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের উক্তি ও বাণী সমূহ
আত্ম উন্নতির জন্য সর্বদা প্রশিক্ষণ দরকার।
সমাজকে দর্শনের সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে। যে দর্শন শিক্ষা, অর্থনীতি ও রাজনীতিকে পরিচালিত করে।
মূল্যবোধ কে বিকশিত করতে হবে, মনের ভয়কে দূরীভূত করতে হবে, চেতনা শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করাই শিক্ষকদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, বরং বিভিন্ন কল্যাণকর কাজে তাদের উৎসাহিত করা।
কিছু ভালো পুস্তক আমাদের কোন নীতির অনুগামী হতে সাহায্য করে।
শিক্ষার্থীরা যাতে সৎ চরিত্রের অধিকারী হয় তার দায়িত্ব একমাত্র শিক্ষকদের। সদাচার, সৎ ব্যবহারই শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের প্রধান বিষয়।
Read more: সেরা 50 টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের উক্তি । বাণী । কবিতা
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর অনুপ্রেরণামূলক উক্তি:
নীচে অনুপ্রেরণামূলক কয়েকটি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি দেওয়া রইল-
শিক্ষার সর্বোত্তম ফল হওয়া উচিত একজন সৃজনশীল মানুষ, যিনি সকল পরিস্থিতি এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবেন।
যারা প্রকৃত মানুষ তারা অন্য কারোর প্রতি কখনও অবজ্ঞা পোষণ করেন না, অন্য কারোর অপেক্ষা নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন না।
একজন সহকর্মীর সেবা করা একটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। তবে এটিকে প্রত্যাখ্যান করা অভদ্রতা।
Read more: রইল মহাভারতের বিশেষ উক্তি ও শ্রী কৃষ্ণের শাশ্বত বাণী
প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি তার নিজের জীবন ও কাজের মধ্য দিয়েই প্রেম ও সহিষ্ণুতার বীজ বপন করে।
জীবনকে কখনও একটা সহজ জ্যামিতিক ছক ভেবো না, জীবনের সারবস্তুই হচ্ছে সৃজনশীলতা।
শিক্ষার্থীদের একটি গণতান্ত্রিক দেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা প্রতিটা শিক্ষকেরই কর্তব্য।
জ্ঞানের আলোই পারে কোন ব্যক্তির অভ্যন্তরের সুপ্ত ক্ষমতাকে জাগিয়ে তুলতে।
প্রকৃত মহান তারা নন যারা বেশি ধনবান কিংবা সামাজিক মর্যাদায় যারা বড় বেশি।
মৃত্যু কখনই শেষ বা বাধা নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যু এক নতুন পদক্ষেপের শুরু।
মানুষের ভালো স্বভাব ও আত্মজ্ঞানের প্রচেষ্টাই সমস্ত খারাপকে দূরে ঠেলে দিতে পারে।
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর মূল্যবান চিন্তাভাবনা:
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি ও তার মূল্যবান চিন্তা ভাবনা যা আজও চিরস্মরণীয়-
টাকা দিয়ে কখনও মনে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় না।
কলেজে প্রবেশ এখন যতটা না সহজ হয়ে গেছে, তার চেয়েও বেশি কঠিন হয়েছে শিক্ষিত হওয়া।
সমগ্র দেশে বেকারত্বের অন্যতম কারণ হল বিজ্ঞানের প্রয়োগ না করা, তা কৃষি কাজে হোক বা শিক্ষা ক্ষেত্রে।
যেদিন থেকে আমরা মনে করি আমরা সব জানি, সেদিন থেকে আমরা নতুন কিছু শেখা বন্ধ করে দিই।
শিক্ষকরা যেন শিক্ষকতা কে বৃত্তি হিসাবে গ্রহণ না করে, বরং একে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে।
Read more: জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর বিখ্যাত উক্তি ও চিরস্মরণীয় বাণী
টাকা শুধুমাত্র মানুষের প্রয়োজন মেটায়, কখনও পরিপূর্ণতা দেয় না। কেবল আত্মিক আনন্দই তা পারে।
শ্রেষ্ঠ বই আর মহান ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে থাকা মানুষরাই আসল সফলতার অধিকারী।
অর্থই সব নয়, অর্থ দিয়ে উৎকৃষ্টকে পাওয়া যায় না। কাম্য সম্পদ হিসাবে আমাদের সকলের চাই মন ও হৃদয়ের প্রশান্তি। কারণ সহৃদয়তা কখনও টাকায় বিকোয় না।
আমাদের এমন শিক্ষার প্রয়োজন যা জগতের মানুষের কল্যাণ সাধনে সক্ষম। যার সাহায্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।
শিক্ষকদের আচরণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনুকরণ যোগ্য হওয়া উচিত। শিক্ষকরা যদি সঠিক পথ দেখাতে পারে তাহলেই শিক্ষার্থীরা সেই পথে চলতে শিখবে।
গ্রন্থাগারগুলো বহু চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও লেখকদের চাহিদা পূরণ করেছে।
অন্তরের সমস্ত কলুষতা দূর করার জন্য চাই শিক্ষা। শিক্ষাই হবে আত্মিক উন্নতির একমাত্র সহায়ক।
সব শেষে, ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি গুলি আমাদের চলার পথে অনুপ্রেরণা যোগাবে। শুধু তাই নয়, ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি আজও চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন ও উত্তরঃ
Q. ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কতসালে জন্মগ্রহণ করেন?
A. ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। এই বিশেষ দিনেই সারা বিশ্ব জুড়ে শিক্ষক দিবস পালিত হয়।
Q. বিখ্যাত একটি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ এর উক্তি কি?
A. শিক্ষকদের দ্বারাই দেশের ভবিষৎ তথা আগামী প্রজন্মের ভিত্তি মজবুত হতে পারে।
Q. ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কতসালে মৃত্যুবরণ করেন?
A. ১৯৭৫ সালে ১৭ই এপ্রিল।
Q. ৫ সেপ্টেম্বর কেন শিক্ষক দিবস পালিত হয়?
A. ১৯৬২ সালে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। সেইসময় তার ছাত্ররা ৫ সেপ্টেম্বর দিনটিকে একটি বিশেষ দিন হিসাবে উদযাপনের অনুমতি চায়। পরিবর্তে তিনি, সমাজে শিক্ষকদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ৫ সেপ্টেম্বর দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করার অনুরোধ জানায়।
Q. শিক্ষক দিবসের জনক কাকে বলা হয়?
A. ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কে শিক্ষক দিবসের জনক বলা হয়। কারণ তার জন্মদিনের বিশেষ দিনটিকেই সারা বিশ্বে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এছাড়াও তিনি মনে করতেন, শিক্ষকরাই আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক।